রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণার দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি ও ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলন থেকে আন্দোলনের বিস্তারিত কর্মপন্থা তুলে ধরেন সম্মিলিত খতমে নবুয়ত পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হবে এবং এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়িত না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী সম্মেলনে আন্দোলনের কর্মপন্থা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ঘোষিত কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে।
তিন ধাপের কর্মসূচি
ঘোষণা অনুযায়ী আগামী কয়েক মাসে নিম্নলিখিত কার্যক্রম পরিচালিত হবে—
১. গণস্বাক্ষর অভিযান:
৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ।
২. স্মারকলিপি প্রদান:
মে ও জুন মাসে দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।
৩. বিভাগীয় মহাসম্মেলন:
জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগে খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের আয়োজন।
মাওলানা রাব্বানী জানান, দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর জাতীয় ওলামা সম্মেলন ডেকে নতুন কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে।
সম্মেলনে ছয় দফা ঘোষণা
সম্মেলনে ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস ‘খতমে নবুওয়ত’ সংরক্ষণ এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের দাবিতে ছয় দফা ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। মাওলানা মাহফুজুল হক ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে বক্তারা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পরিচয়, উপাসনালয়, ইসলামী পরিভাষার ব্যবহার, বিবাহ, জানাজা ও ধর্মীয় প্রচারসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। বক্তারা দাবি করেন, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, পাকিস্তানসহ কিছু দেশে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করার উদাহরণ রয়েছে। আয়োজকরা দাবি করেন, ওআইসি ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিষয়ে পূর্বে মতামত দিয়েছে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঘোষণা
সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ জানান, তারা আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে সাংবিধানিক উপায়েই আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান। কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ বা সহিংসতার পথে না যাওয়ার আহ্বানও জানান তারা।
ঘোষণাপত্রে আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে পরিচিত কাদিয়ানিদের জন্য ধর্মীয় আচার-আচরণ সংক্রান্ত ছয়টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়:
১. অমুসলিম ঘোষণা: আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামধারী তথাকথিত কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের সংখ্যালঘু অমুসলিম। তারা ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ নামে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবে না এবং সব ক্ষেত্রে ‘কাদিয়ানি সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত হবে।
২. ইসলামী পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা: কাদিয়ানিরা তাদের ধর্মকে ইসলাম আখ্যায়িত করতে পারবে না এবং কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, আজান, ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি কোনো ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করতে পারবে না।
৩. উপাসনালয় ও নিদর্শন: কাদিয়ানিরা তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ নামকরণ করতে পারবে না। সেটি ‘কাদিয়ানী উপাসনালয়’ হিসেবে পরিচিত হবে। এছাড়া সাহাবি, উম্মুল মুমিনিন-এর মতো কোনো ইসলামী বিশেষ নিদর্শন তারা ব্যবহার করতে পারবে না।
৪. বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম: কাদিয়ানিদের সঙ্গে মুসলমানের বিবাহ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। পরিচয় গোপন করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. জানাজা ও উত্তরাধিকার: কাদিয়ানিদের জানাজা পড়া যাবে না এবং কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা যাবে না। কাদিয়ানি ও অমুসলমানের মাঝে কোনো উত্তরাধিকারের বিধান প্রযোজ্য হবে না।
৬. প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা: কাদিয়ানিরা ইসলাম প্রচারের নামে কোরআনের বিকৃত অনুবাদ কিংবা কোনো বই, পুস্তিকা, লিফলেট ইত্যাদি ছাপতে বা প্রচার করতে পারবে না।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্ম ইসলামের সুরক্ষা, কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার স্বার্থে অবিলম্বে উপরোক্ত ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
রিপোর্টার্স২৪/এসসি