সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
‘জামায়াতে ইসলামি’র কার্যালয়, সাইনবোর্ড লাগানো বহুল আলোচিত পরিত্যাক্ত ভবনটির মালিকানা নিয়ে রয়েছে ধুম্রজাল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভবনটিকে তুলা ইন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় বলা হলেও তুলা উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভবনটি তাদের নয়। অর্ধশতবছরেরও বেশি পূরনো ভবনটি বিভিন্ন সময়ে ব্যাবহৃত হয়েছে সরকারি অফিস-ব্যাক্তি মালিকানাধিন গোডাউনসহ বিভিন্ন রুপে। সর্বশেষ পরিত্যাক্ত ভবনটি জামায়াতে ইসলামি’র স্থানীয় কর্মিরা দখল করেছে বলা হলেও, প্রকৃতপক্ষে পরিবেশ রক্ষায় এটি সংস্কার ও ব্যাবহার উপযোগি করেছে ভবন সংলগ্ন মসজিদের মুসুল্লি ও ব্যাবসায়িরা।
সরেজমিন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা’র পৌর এলাকার সদর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বহুল আলোচিত ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি থেকে কাঠের সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছে উল্লাপাড়া কামিল মাদ্রাসার কর্মিরা। প্রশ্ন করলে তারা জানান, প্রায় ৮ বছর যাবৎ উল্লাপাড়া কামিল মাদ্রাসার কিছু নিচু বেঞ্চ পড়ে ছিল জীর্ন এই ভবনটিতে। একসময়ে মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীরা এগুলোতে বিছানা পেতে বসবাস করতো। ২০১৯ এর কোভিড-১৯ মহামারিতে শিক্ষার্থীরা চলে গেলেও পড়ে ছিল এই সরঞ্জামগুলো।
ভবনটিতে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়া একতলা ভবনটিতে রয়েছে দুটি রুম। জানালার গ্রিল বা কাঠামো না থাকায় ঢেকে রাখা হয়েছে প্লাষ্টিক দিয়ে। মেঝে ও দেওয়াল সংস্কার করে লাগানো হয়েছে রং। রংয়ে কিছুটা ঢাকা পড়লেও ভবনটির দেওয়ালের ভাঙ্গাচোরা দৃশ্যমান।
কথা হয় উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের সাথে, তিনি বলেন পরিত্যাক্ত ভাঙ্গা-চোরা ভবনটি এক বছর আগেও ছিল প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের রাখা লাকড়ি-খরে ঢাসা। ছিল মাদকসেবীদের আনাগোনাও। এটি ইউনিয়ন পরিষদের বা সরকারি সম্পত্তি না হওয়ায় পরিষদ ভবন লাগোয়া হলেও নজর দেওয়া হয়নি কখনো। ৫ই আগস্ট পরে ভবন সংলগ্ন মসজিদের কমিটি’র সদস্য ও মুসুল্লিরা প্রথম এটি পরিস্কার করে, মাঝে মাঝে এখানে বসতেও দেখা গেছে তাদের। মাস তিনেক আগে এটিতে জামায়াতে ইসলামির অফিসের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কোন অভিযোগ জানাতে বা কিছু করতে আসেনি।
উল্লাপাড়া বাজারের ব্যাবসায়ি ও মসজিদের মুসুল্লি শামসুল ইসলাম বলেন, পরিষদ, পরিত্যাক্ত ভবন ও কামিল মাদ্রাসার মাঝে অবস্থিত মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় ও বিকেলে ধর্মীয় আলোচনা করে স্থানীয় ব্যাবসায়ি ও মুসুল্লিরা। কিন্তু একদম মসজিদের সাথে লাগানো পরিত্যাক্ত ভবনটিতে রাখা আবর্জনা ও মাদকসেবীদের আনাগোনায় ধর্মীয় কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হয়। ফলে মসজিদ কমিটি ব্যাবসায়ি ও মুসল্লিদের দেওয়া সহযোগিতার অর্থে একবছর আগে এটি সংস্কার করে মসজিদের পরিবেশ রক্ষায়। তারপর থেকে এখানেই সান্ধ্যকালিন সময়ে ধর্মীয় আলোচনা হত। একপর্যায়ে স্থানীয় জামায়াত ইসলামের কর্মিরা মুসল্লিদের অনুমতি নিয়েই সাইনবোর্ড লাগায়, এবং নিয়মিত স্থানীয় ব্যাবসায়ি ও মুসল্লিদের সাথে এখানে বসে তারা আলোচনা করতো।
স্থানীয়রা জানায়, এই ভবনটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনেরা ব্যাবহার করেছে। দীর্ঘসময় পরিত্যাক্ত থাকার পর ২০১৭ সালে উল্লাপাড়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ভবনটি পরিস্কার ও সংস্কার করে। ঐ সময় থেকে করোনা সংক্রমন অবধি মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী এটিকে মেস হিসেবে ব্যাবহার করে চলে গেলে আবারও ভবনটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ৫ই আগস্টের পর ভবনটি সংস্কার করা হলে প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় জামায়াতের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। যেটি আবারও তিনদিন আগে অপসারন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামি’র আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের নজরে আসার পর আমরা দলীয় সাইনবোর্ড সরিয়ে নিয়েছি, যেটি লাগানো হয়েছিল আমাদের অগোচরে। পরে খোজ নিয়ে যেটুকু জানতে পেরেছি, এটি মুসুল্লিরা পরিস্কার করে ব্যাবহার করছিল। তাদের সাথে আলোচনা করেই সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল কর্মিরা। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কোন আপত্তি করেনি।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সরকারি ভবন দখলের যে ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে, এটি দু:খজনক। জামায়াতে ইসলামি কোন দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। ৫ই আগস্ট পরবর্তীতে সাংগঠনিক ব্যাপক বিস্তারের ফলে নেতৃবৃন্দের দৃষ্টির অগোচরেই এই ঘটনাটি ঘটেছে।
গনমাধ্যমে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ভবন দখলের কথা বলা হলেও, ভবনটির মালিকানা নিজেদের নয় বলে জানিয়েছেন বগুড়ার আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে উল্লাপাড়ায় একটি অফিস ছিল, যেটি ভাড়ায় চলতো। কিন্তু কাকে ভাড়া দেওয়া হত এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মো: হাসনাত বলেন, সরাসরি সরকারি সম্পত্তি নয় আলোচিত এই ভবনটি, এটি আমাদের নজরেও ছিল না। সম্প্রতি আলোচনায় আসার পর এসিল্যন্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভবনটির মালিকানা বিষয়ে খোজখবর নিতে। কাগজপত্র পরিক্ষা করে জানা গেছে এটি সরাসরি সরকারি সম্পত্তি নয়, এটি রেকর্ড হয়েছে ইউনিয়ন সমবায় সমিতি’র নামে। আর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো: মারুফ হোসেন বলেন, একরম কোন সম্পত্তি আমাদের রয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমি সমবায় সমিতিগুলোর সাথে যোগোযোগ করছি সম্পত্তিটির বিষয়ে নিশ্চিত হতে।
.
রিপোর্টার্স২৪/এস