ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ‘পালিয়ে যাওয়া’ প্রমাণ করেছে যে তাঁর দলের কর্মী এবং দেশের জনগণের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্রও দরদ ছিল না। তিনি কর্মীদের অসহায় অবস্থায় রেখে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মাটিতেই আমাদের জন্ম, এই মাটিতেই আমরা থাকি, এখানেই সুখ-দুঃখের সঙ্গে বাঁচি এবং মরলে এই মাটিতেই মরবো। দেশের মাটি ছেড়ে কখনো যাবো না।
রোববার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জগন্নাথপুর ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যক্তিগত ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "আমি বহু কষ্ট করেছি। আপনারা জানেন যে আমি ১১ বার জেলে গিয়েছি। পুলিশ আমাকে সেই সেলে পাঁচ দিন আটক করে রেখেছিল, যেই সেলে মৃত্যুদণ্ড আসামিদেরকে রাখা হয়। আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছি।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নৌকাটা এবার দেখা যাচ্ছে না। আরেকটা দেখা যায় দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লাও এবার ইলেকশন করবে। সুতরাং আপনাদের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা ও ধানের শীষের মধ্যে বেছে নিতে হবে প্রার্থী।"
দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও সাধারণ মানুষের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, "ধানে-আলুতে এবার মাইর খাইছে কৃষক। আলু হিমাগার থেকে আনতেছে না, তার মানে কৃষি কাজ করে লাভবান হতে পারছেন না।"
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের কষ্ট বোঝে না। বিএনপি সরকারে এলে কৃষকদের এবং মা-বোনেদের সুবিধা দেওয়ার জন্য দুটি বিশেষ কার্ড চালু করা হবে।সব বাড়ির মায়েদের কাছে একটি করে কার্ড থাকবে। এই কার্ডের মাধ্যমে মায়েরা ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। প্রতিটি কৃষকের কাছে এই কার্ড থাকবে। এর মাধ্যমে কৃষক ন্যায্য মূল্যে সার, বিষ, সেচের পানি এবং তার ফসলের ন্যায্য বাজার করতে পারবেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে 'টানা-হেঁচড়া' উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, "একটা দল বলতেছে গণভোট হতে হবে। সাধারণ মানুষ আপনারা কি এত কিছু কি বুঝেন? গণভোট, সনদ এইসব কি আমরা বুঝি। এইসব বুঝে শিক্ষিত উঁচু তলা থেকে কিছু লোক আসছে, আইশা আমাদের ঘাড়ের উপর চাপাচ্ছে।"
তিনি বলেন, বিএনপি যতগুলো পরিবর্তন বা সংস্কার করতে চায়, সেগুলোর সঙ্গে তারা রাজি আছেন। তবে "যেটা রাজি হবো না সেটা পার্লামেন্টে যাবে। পার্লামেন্টে গিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে, ভোটাভুটি হবে, সেখানে পাস হবে।"
গণহত্যা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, "২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট জুলাইতে গণহত্যা হয়েছিল ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও গণহত্যা হয়েছিল। এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য একটাই—তখন পশ্চিম হানাদার বাহিনী পাকিস্তান আমাদের এখানকার কিছু লোকজনকে নিয়ে তারা এই গণহত্যা করেছিল আর এইবার শেখ হাসিনা তার প্রশাসনকে দিয়ে আমাদের ছেলেগুলোকে মারছে।"
রিপোর্টার্স২৪/এসএন