রিপোর্টার্স ২৪ ডেস্ক : ঘরের লম্বা আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে অনর্গল কথা বলেন? নিজেকে বকাঝকা করা, নিজের প্রতি ভালবাসা জানানো, অথবা কোনও ভাষণ প্রস্তুত করা, কিংবা প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার আগে বার বার বলে দেখার কাজেও লাগে? কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, এমন অভ্যাসের কারণ কী? এর ভাল এবং খারাপ দিকও যে আছে, তা কি জানেন?
আয়নায় নিজের সঙ্গে কথা বলা, বা ‘মিরর টক’-এর নেপথ্যে নানাবিধ কারণ থাকে। আয়নায় নিজের সঙ্গে কথা বলা মানে নিজেকে প্রস্তুত করা। এটি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব গঠনের এক ধরনের প্রক্রিয়া। মনোবিদেরা বলেন, যখন আপনি আয়নায় নিজেকে দেখে প্রশংসা করেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক সেই বার্তাগুলি গ্রহণ করে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত আয়নার সামনে কথা বললে মানুষের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে। একটি সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা ১০ দিন ধরে আয়নায় কথা বলার অভ্যাস করার পর তাঁদের আত্মবিশ্বাসে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, এক এক পেশার মানুষ এক এক কারণে এই কাজটি করতে পারেন। যিনি অভিনেতা, তিনি মঞ্চে ওঠার আগে বা ক্যামেরার সামনে যাওয়ার আগে সংলাপ বলে নেন। আসলে তখন তাঁদের লক্ষ্য থাকে নিজেকে দেখা। দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করেন তাঁরা। সংলাপ বলার সময়ে তাঁদের শরীরী ভাষা কেমন হচ্ছে, মুখভঙ্গি কেমন থাকছে, সব পরীক্ষা করে নেন। নৃত্যশিল্পীরাও একই কারণে আয়নার সামনে নাচের অনুশীলন করেন। আবার যাঁরা মিটিংয়ে বা কনফারেন্সে ভাষণ দেবেন, তাঁরাও তাঁদের ভাষণ বলে দেখে নেন। এতে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। আয়নায় নিজের সঙ্গে কথা বলা একটি সহজ, কিন্তু কার্যকরী অভ্যাস, যা আপনার আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে।
তবে এ ছাড়াও অনেকে কেবল নিজের মনের ভিতর চলতে থাকা হাজারো ভাবনাকে কথোপকথনের রূপ দেন আয়নায় কথা বলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে অনেকেই নিজেকে প্রশ্ন করেন এবং উত্তরও দেন। অথবা নিজেকে যোগ্য, সক্ষম প্রতিপন্ন করার চেষ্টাতেও এই অনুশীলন করে থাকেন। এর ফলে নিজের দেহ বা শরীরের বাইরে বেরিয়ে নিজেকে দেখার ক্ষমতা তৈরি হয়।
তবে মনোবিদ বলছেন, এর কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলে তার পর মানসিক জোর অর্জন করেন, তাঁদের কারও কারও মধ্যে সীমবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। যদি এমন মনোভাব দেখা যায় যে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা না বললে তিনি আত্মবিশ্বাস অর্জনই করতে পারছেন না, যদি আয়নার সামনে অভ্যাস না করলে বাইরে গিয়ে কথাই বলতে পারবেন না, তা হলে বুঝতে হবে, ওই অনুশীলন তাঁকে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে। সেখানেই তৈরি হচ্ছে কন্ডিশনিং বা শর্তসাপেক্ষতা। অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস বা মানসিক জোর শর্তসাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। যার জন্য দায়ী আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথোপকথন। তাতে আখেরে ক্ষতিই হয়।’’ তাই মনোবিদের পরামর্শ, নিজেকে শক্তিশালী এবং প্রস্তুত করার জন্য আয়নায় নিজেকে দেখে কথা বলার অভ্যাস করতে পারেন, কিন্তু সেটিই যেন হিতে বিপরীত হয়ে না দাঁড়ায়।- আনন্দবাজার পত্রিকা।
রিপোর্টার্স ২৪/এমবি