যশোর প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলা, হয়রানি এবং আদালতের আদেশ অমান্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী স্নেহলতা পারভিন, চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর গ্রামের মৃত হায়দার আলির কন্যা। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওসি আনোয়ার হোসেন অর্থের বিনিময়ে মাকাপুর গ্রামের একদল দখলবাজের সঙ্গে যোগসাজশে, তার পরিবারসহ নিরীহ মানুষকে ক্রমাগত মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে আসছে।
তিনি বলেন, ওসি আনোয়ার হোসেন লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার রাসেলের থেকে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় দখলবাজ ছামসার মোল্লা, বাবুরালি মোল্লা, কাজেমসহ কয়েকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন ওসি। একইসাথে তাদের বাদী করে মনগড়া মামলা করে যাচ্ছেন। ফলে নিরীহ গ্রামবাসী ও আমার পরিবার চরম আতঙ্কে দিন পার করছে।
স্নেহলতা বলেন, ‘ওসি আনোয়ার হোসেনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আরও মিথ্যা মামলা ও হুমকি দিচ্ছেন।’
তিনি জানান, পিতার (মৃত হায়দার আলী) রেখে যাওয়া প্রায় ৫০ বিঘা জমির সুষ্ঠু বণ্টন নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরেই ঘটনার শুরু। তার লন্ডনপ্রবাসী ভাই ব্যারিস্টার মতুজা রাসেল কয়েক বছর ধরে ওই সম্পত্তি এককভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এ ঘটনায় ওসি আনোয়ার স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আমার ও আমার পরিবারকে হয়রানি করছে। স্নেহলতার জানান, থানার ওসি মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পাঁচটি ভুয়া মামলা রুজু করেছেন। যা ভিত্তিহীন বলে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত মাসে স্থানীয় ছামসার মোল্লা, বাবুরালি মোল্লা ও কাজেমগং ওসি আনোয়ারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জমি দখলে সশস্ত্র হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে আল-ইমরান এবং লাভলি উপস্থিত হলে তাদেরকে দেশীয় অস্ত্র (শাবল), লাঠিসোঁটা ও গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক পেটায়। ঘটনাটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কাজেম আলী, বাবুরালী মোল্লা এবং সামছার মোল্লা মারতে উদ্দ্যেত্ত। এদিকে, এসকল জমি পরিমাপ বা দখলের বিষয়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশ রয়েছে। আদালত জানিয়েছেন সকল ওয়ারিশের উপস্থিতিতি ছাড়া মাপ বা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে চৌগাছা থানার ওসি সে বিষয়ে অবগত থাকলেও তিনি এ কাজে সহযোগিতা করে।
স্নেহলতা জানান, ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ অক্টোবর। আমরা ওইদিনই মামলা করি। এদিকে আমাদের ফাঁসাতে ব্যারিস্টার রাসেলের পরামর্শে ওসি আনোয়ার মিথ্যা মামলা ঋজু করেন ২৭ অক্টোবর। যে মামলার বাদি হয় আমার বাবার (মৃত হায়দার আলী) হত্যা মামলার ৩ নং আসামি মো. হাসিবুল। তিনি বলেন, মিথ্যা এ মামলাতে আসামি হিসেবে আল ইমরান এবং মুকুট ঢালীকে আটক করা হয় ২৬ অক্টোবর।
তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, মাকাপুর গ্রামে ২৫ অক্টোবর সংঘর্ষে জড়িত দেখিয়ে আমাদের আসামি করা হয়েছে। অথচ, আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। মামলায় আসামি দেখানো মো. আলী আহম্মদ ছিলেন বরিশালে নিজ কর্মস্থলে। স্নেহলতা পারভিন (আমি)-ছিলেন যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে, জেসমিন আক্তার লাকি মহেশপুর উপজেলাতে এবং মুকুট ঢালি চৌগাছা উপজেলাতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তবে, ওসি আনোয়ার উলটো আমাদের (ভুক্তভোগীদের) আসামি বানিয়ে হয়রানি করছে। তার এমন হয়রনি থেকে বাদ পড়ছে না আমার লন্ডনপ্রবাসী আর এক ভাই রুবেনও। দেশে না থাকলেও বিভিন্ন মামলায় দেশে দেখিয়ে তার বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে ওসি আনোয়ারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই পক্ষ মামলা করে তারা জামিনে আছেন। আমার এখানে করনীয় কি?
দুই পক্ষ মামলা করলেও কেন ভুক্তোগীদের আগে গ্রেপ্তার করে পরে মামলা ঋজু করা হয়, এবং আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে ওসি আনোয়ার উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন আপনি আমার থানায় আসেন...! তার পরই লাইন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
স্থানীয়রা জানান, ওসি আনোয়ার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এলাকায় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে, এবং তার আচরণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মাননীয় আইজি ও খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের কপি, মামলা গ্রহণ করতে অশিকৃতির অডিয়ো রেকর্ডসহ নানা তথ্য-উপাত্তা দেখান স্নেহলতা পারভিন।