আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাঁতার, ব্যয়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসছে না! কারণ, পেটের খিদে। শরীর চর্চা করে যতটা মেদ ঝরাচ্ছেন, ততটাই আবার পেটে পুরছেন। এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের শরীরেই রয়েছে এক প্রোটিন, যা খিদেয় লাগাম পরাতে পারে। এমআরএপি২ নামে এই প্রোটিন খিদের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মস্তিষ্কে থাকা খিদের রিসেপটর (সংবেদী স্নায়ু) এমসি৪আরকে কোষের পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দেয় এই প্রোটিন। সেখানে গিয়েই এই রিসেপটর বলে, ‘এবার খাওয়া বন্ধ করো’! বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার এবার স্থূলতা (ওবেসিটি) নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা নিতে পারে।
জার্মানির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা একটি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। তার নাম সিআরসি ১৪২৩। সেই কেন্দ্রের গবেষকেরা খিদে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তাঁরা দেখেন, খিদের নেপথ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট এক প্রক্রিয়া। এমআরএপি২ (মেলানোকর্টিন ২ রিসেপটন অ্যাকসেসরি প্রোটিন ২) মস্তিষ্কের রিসেপটর এমসি৪আর (মেলানোকর্টিন-৪ রিসেপটর)-কে প্রভাবিত করে। এটি খিদে নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তির ভারসাম্য রাখতে উল্লেখ্য ভূমিকা নেয়। এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।
এমসি৪আর মস্তিষ্কের এক সংবেদী স্নায়ু। পেপটাইড হরমোন এমএসএইচ দ্বারা সক্রিয় হয়। এই এমসি৪আর নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেন, শরীর স্থূল হওয়ার অন্যতম কারণ হল এই এমসি৪আর-এর মিউটেশন। গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্যাট্রিক স্কিরার। তিনি জানান, রিসেপটর যখন সক্রিয় হয়, তখন তার ৩ডি ছবি তোলা হয়েছে। সাধারণ আয়ন এবং সেটমেলানোটাইড নামে এক ধরনের ওষুধের সংস্পর্শে এলেই এই রিসেপটর সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই অবস্থায় তার কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। খিদে কমানোর জন্য এই ওষুধ সেটমেলানোটাইড ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ওই ওষুধই সক্রিয় করে তোলে রিসেপটরকে।
বিজ্ঞানীরা ফ্লুওরোসেন্স মাইক্রোস্কপি প্রক্রিয়াও ব্যবহার করেছে। এতে কোষে বিশেষ উজ্জ্বল রং প্রয়োগ করা হয়। তা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, কোষের মধ্যে এমসি৪আর-এর অবস্থান এবং চরিত্রের বদল ঘটায় এমআরএপি২ প্রোটিনটি। এটিই এমসি৪আর-কে কোষের পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গিয়ে ওই রিসেপটর বলে, ‘‘এ বার খিদে নিয়ন্ত্রণ করো’’! বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া তাঁরা বোঝার কারণে, তা স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। তাঁরা মনে করছেন, প্রোটিনের এই চরিত্র স্থূলতা নিয়ন্ত্রণেও কাজে আসবে। এই গবেষক দলে রয়েছেন ব্রিটেনের সেন্ট অ্যান্ড্রিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাওলো অ্যানিবাল। তিনি জানান, কোষের মধ্যে অণু কী আচরণ করে, তা এই গবেষণায় কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। রিসেপটরের চরিত্রও অনেকটাই স্পষ্ট।- আনন্দবাজার।
রিপোর্টার্স২৪/এমবি