জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। আগামী ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আগামী ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা সহ অন্যান্য আসামীদের এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। রায়কে কেন্দ্র করে বাইরের বিশৃংখলার বিষয়ে তিনি বলেন এ বিষয়ে রাষ্ট্র সরকার সবকিছু দেখবে আদালতের বিষয়ে কেউ যদি কোন আন্দোলন করে সেটা হবে আদালত অবমাননার শামিল।
এ উপলক্ষে আজ ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বরে নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ-র্যাব, বিজিবি-সেনাবাহিনী ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
একইসঙ্গে আশপাশে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপত্তা। এমনকি তল্লাশি চালিয়ে জনসাধারণ ও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে বিকেল থেকেই ট্রাইব্যুনালের সামনে বিজিবির সদস্যদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রায়ের দিনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন উসকানিমূলক কার্যকলাপ বা বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন আদালতের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
এদিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় সমাপনী বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও রয়েছে। রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। এজন্য যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা-কামালের চরম দণ্ড বা সর্বোচ্চ সাজা চাইলেও তার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে প্রসিকিউশন। মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও তার অ্যাকুইটাল (খালাস) চেয়েছেন। সবমিলিয়ে সাবেক এই আইজিপির মুখে হাসি ফুটবে নাকি অন্য কিছু; তা জানা যাবে রায় ঘোষণার দিন।
এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এদিকে, শেখ হাসিনার রায়ের দিন নির্ধারণ ঘিরে লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ। ফলে আগুন-ককটেলসহ বিভিন্ন অপকর্মে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তবে এমন কর্মকাণ্ডে কোনো ধরনের অনিরাপদ বোধ করছে না বলে জানিয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।
এর আগে গতকাল ট্রাইব্যুনালে সেনা সদস্য মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম প্রসাশন সেনা সদর দফতরে আবেদন করেন।
রিপোর্টার্স২৪/ঝুম