রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী ‘চিকেনস নেক’ খ্যাত শিলিগুড়ি করিডোরকে ঘিরে ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা নিয়ে দুই দেশেই চলছে নানা বিশ্লেষণ। আসাম ও উত্তর দিনাজপুরে দুটি নতুন সেনা ঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগ ভারতের এই কৌশলগত অবস্থানকে নতুন করে গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।
শিলিগুড়ি করিডোর: ভারতের স্পর্শকাতর ভূরাজনৈতিক এলাকা
শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের একমাত্র সংযোগপথ। পাশাপাশি এই অঞ্চলে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও চীনের সীমান্তও ঘনিষ্ঠভাবে অবস্থান করছে। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা এবং করিডোরের নিরাপত্তা জোরদার করাই ভারতের প্রধান উদ্দেশ্য।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জী জানান, আসাম ও উত্তর দিনাজপুরে নতুন আর্মি স্টেশন স্থাপন ‘সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’। তার মতে, চীনের কার্যক্রম বিবেচনায় এই এলাকা ভারতের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
লালমনিরহাট সীমান্ত নিয়ে ‘গুজব’: বিজিবির স্পষ্ট ব্যাখ্যা
এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লালমনিরহাট সীমান্তের ৬২ কিলোমিটার ভারতের দখলে চলে গেছে, এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তে বিজিবি এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানায়।
১৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন,‘এটি সম্পূর্ণ মনগড়া তথ্য। স্থানীয় জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এ খবর ছড়ানো হয়েছে। সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।’ তিনি আরও জানান, বিএসএফের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও যৌথ টহল কার্যক্রম চলছে।
সীমান্ত অঞ্চলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তবে নজরদারি বেড়েছে
লালমনিরহাটের ধরলা নদীর তীরে স্থানীয়দের স্বাভাবিক কৃষিকাজ ও যাতায়াত দেখা গেলেও বাসিন্দারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিএসএফের টহল ও নজরদারি বেড়েছে।
তবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনায় গুলিবর্ষণের ঘটনাও থামেনি; ১১ নভেম্বর এমন এক ঘটনায় তিন বাংলাদেশি আহত হন।
ভারতের নতুন সেনা ঘাঁটি: কৌশলগত বার্তা?
আসামের ধুবরি ও উত্তর দিনাজপুরের চোপরায় ভারত যে দুটি নতুন সামরিক স্টেশন তৈরি করছে, তা বাংলাদেশের সীমান্তের খুব কাছেই। সামরিক মহলে এটি ভারতের বৃহত্তর নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরীর মতে, ভারতের এই উদ্যোগের নেপথ্যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—
১. শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা
২. চীনের আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা
৩. বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সংশ্লিষ্ট ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
তিনি মনে করেন, ভারত এই সামরিক তৎপরতার মাধ্যমে ‘গ্রে জোন ব্যাটল’ কৌশল প্রয়োগ করছে যেখানে সরাসরি সংঘাত ছাড়াই সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়।
বাংলাদেশের অবস্থান
বিজিবি স্পষ্ট জানিয়েছে ভারতের এই সামরিক প্রস্তুতি এখনো বাংলাদেশের জন্য কোনো নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা হয়নি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, “তারা নিজের ভূখণ্ডে যে কোনো স্থাপনা করতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত তা আমাদের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে, ততক্ষণ এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশকে সামরিক হুমকি হিসেবে দেখে না ভারত। তবে দীর্ঘ সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারকে তারা উদ্বেগ হিসেবে বিবেচনা করে।
উপসংহার
শিলিগুড়ি করিডোরকে ঘিরে ভারতের সামরিক তৎপরতা দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনেরই প্রতিচ্ছবি। যদিও সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, তবুও সামরিক প্রস্তুতির এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত। সূত্র: বিবিসি
রিপোর্টার্স২৪/এসসি