| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে ২৬ টুকরো লাশ : দুই তথ্য দিলো পুলিশ ও র‌্যাব

  • আপডেট টাইম: 15-11-2025 ইং
  • 2589 বার পঠিত
রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে ২৬ টুকরো লাশ : দুই তথ্য দিলো পুলিশ ও র‌্যাব
ছবির ক্যাপশন: ছবি: সংগৃহীত

সিনিয়র রিপোর্টার: রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়ে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২) হত্যায় জড়িত জরেজুল ইসলাম (৩৯) ও শামীমা আক্তারকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। তারা দুজনেই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। 

ডিবি পুলিশ জানায়, এটি ত্রিভুজ প্রেমের কারণে এ নৃশংস হত্যকাণ্ড। অন্যদিকে র‌্যাব জানায়, আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজুল ও শামীমার। সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র‌্যাবকে জানিয়েছেন শামীমা। তবে এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে দুই রকম তথ্য দিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব।

এদিকে শনিবার (১৫ নভেম্বর)  দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে আশরাফুলের বন্ধু জরেজকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তার দেখানো মতে সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি এবং  ভাড়া করা বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এটা আসলে একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি। জরেজুল ইসলাম একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। অনুমান দেড় মাস আগে সে দেশে আসে। বিদেশে থাকাকালীন জরেজুল ইসলামের সঙ্গে “বিগো লাইভ” অ্যাপের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার শামীমা ইসলাম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জরেজুল ইসলাম দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে তাদের মধ্যে পারিবারিক মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে জরেজুল ইসলামের বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার মোবাইল নম্বর দেন তার বন্ধু জরেজুল ইসলামকে এসব থেকে নির্বৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আশরাফুল নিজেই এক পর্যায়ে শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, আশরাফুল তার বন্ধুকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, তার মধ্যে শামীমা ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। মূলত এই টাকার সংস্থান এবং শামীমার সাথে একান্তে দেখা করার আশায় দুই বন্ধু একত্রে রংপুর থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকায় তিনজন একত্রে দেখা করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খোঁজ করছিলো। পরে তিনজনের পরিকল্পনায় তারা ডেমরা থানার ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয় এবং একইদিন দুপুরে বাসায় ওঠে তিনজন মিলে সেই বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। স্থানীয় বাজার থেকে তারা একটি তোশক, তিনটি বালিশ ও জানালার পর্দা কেনে। পরস্পর সম্মতিতে তারা একে অপরের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে কিন্তু আশরাফুল শামীমার সঙ্গে অস্বাভাবিক পথে যৌনকর্ম করতে চাইলে শামীমা তাতে বাধা প্রদান করে। এতে করে দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং শামীমা কান্নাকাটি শুরু করলে জরেজুল বিষয়টি নিয়ে বন্ধুর ওপর হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যান। 

ডিবি প্রধান বলেন, আশরাফুল শামীমাকে জোরাজুরি করার এক পর্যায়ে শামীমা কৌশলে আশরাফুল এর হাত বেঁধে অস্বাভাবিক পথে মেলামেশা করতে প্রলুব্ধ করে।  আশরাফুল এরপর অস্বাভাবিক পথে যৌনকর্ম শুরু করলে ক্ষিপ্ত জরেজুল প্রথমে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে আশরাফুল ডাক চিৎকার শুরু করলে শামীমা তাঁর ওড়না এবং সঙ্গে থাকা স্কচটেপ দিয়ে আশরাফুল এর মুখ বেঁধে দেয়। এভাবে মুখ বাঁধা থাকায় এবং জরেজুল ইসলামের আঘাতে এক পর্যায়ে আশরাফুল মারা যায়। 

তিনি আরও বলেন, আশরাফুল মারা গেলে দুজনে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং লাশ গুম করার উপায় খুঁজতে থাকে। ১২ নভেম্বর সারারাত তারা লাশের সাথেই একই বাসায় অবস্থান করে এবং ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজুল ইসলাম ও শামীমা দুজনে পরিকল্পনা করে লাশ গুম করার জন্য বাজার থেকে দুইটি প্লাস্টিকের ড্রাম, পলিথিন ও লাশ কাটার জন্য স্থানীয় দোকান থেকে একটি চাপাতি কিনে আনে। বাথরুমের পানির ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জরেজুল ইসলাম লাশটি কেটে টুকরা করে শামীমার সহায়তায় ড্রামে ভরে। শামীমা তখন বাইরে গিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে আনে এবং দুজনে সিএনজিতে করে লাশের ড্রামসহ বেরিয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ফুটপাতে তারা লাশ ভর্তি ড্রাম দুইটি রেখে দ্রুত বাসায় ফিরে যায়। বাসায় ফিরে দুজনে বাসার সকল মালামাল নিয়ে বের হয়ে যায়। শামীমা কুমিল্লার দিকে রওয়ানা হয় এবং জরেজ রংপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এক পর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত বদল করে কুমিল্লায় তার এক বন্ধুর বাসায় গমন করলে সেখান থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

অপরদিকে শামীমাকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ভিন্নভাবে দেয় র‌্যাব। শনিবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, শামীমার সঙ্গে জরেজের এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায়, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। যা জরেজ ৭ লাখ টাকা নেবে, আর শামীমা ৩ লাখ টাকা ভাগ করে নিবে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা নিহত আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে একমাস আগে থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। 

তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা করে। ঢাকায় আসার পর গত ১২ নভেম্বর জরেজ ও আশরাফুল শামীমার সঙ্গে দেখা করে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তিনজন একত্রে ভাড়া বাসায় ওঠে।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকায় আসার আগে জরেজ তার প্রেমিকা শামীমাকে ফোনে জানায়, আশরাফুলের সাথে সে যেন অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও দেখিয়ে যাতে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে হালকা অচেতন করে শামীমা। যাতে বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করলে আশরাফুল তা বুঝতে না পারে। পরবর্তীতে যখন তারা একান্ত সময় কাটায় তখন জরেজ বাইরে থেকে ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিও শামীমার মোবাইলে ধারণ করা হয়, যা বর্তমানে উদ্ধারকৃত মোবাইলে রয়েছে।

শামীমার বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন,  গত ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকে দেয়। জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা ভিকটিম আশরাফকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনাস্থলেই আশরাফুল মারা যায়। পরে লাশ একই ঘরে রেখে জরেজ ও শামীমা রাত্রিযাপন করে এবং তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

রিপোর্টার্স২৪/আয়েশা

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪