| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

সারা দেশে ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠালের কদর

  • আপডেট টাইম: 19-07-2025 ইং
  • 457091 বার পঠিত
সারা দেশে ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠালের কদর
ছবির ক্যাপশন: সারা দেশে ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠালের কদর

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও:

শ্রাবনের দুপুর। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ছোটখোচাবাড়ী বাজারে গিয়েই দেখা মিলল এক অন্য রকম চিত্র। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি ভ্যানগাড়ি, প্রতিটি বোঝাই সুগন্ধি কাঁঠালে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকরা মুখে একরাশ অপেক্ষা। বিক্রি হলে হাতে আসবে কিছু টাকা। আর সেসব কাঁঠাল সন্ধ্যা নামলেই ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে পাড়ি জমাবে।

এক সময় যেসব কাঁঠাল শুধুই বাড়ির আঙিনায় পেকে ঝরত, সেসব ফল এখন লক্ষাধিক টাকার বাণিজ্যের উৎস হয়ে উঠেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠাল আজ দেশজুড়ে পরিচিত তার স্বাদ, ঘ্রাণ আর গুণগত মানের জন্য।

ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলার কাঁঠাল বেচাকেনার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সদর উপজেলার ছোটখোচাবাড়ী বাজার। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসা এই হাটে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত জমে ওঠে কাঁঠালের মেলা।

বাজার ঘুরে দেখা গেল, শত শত ভ্যানগাড়িতে বোঝাই কাঁঠাল, চারপাশে দর–কষাকষিতে ব্যস্ত বিক্রেতা ও পাইকারেরা। কেউ গাছ থেকে কিনেছেন আগেভাগেই, কেউ আবার একাধিক গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এনেছেন।

বিকেল গড়াতেই একেক করে ট্রাকের পেট ভরে ওঠে। কাঁঠালের গন্ধমাখা হাওয়ায় ভারী হয়ে থাকে বাজারের বাতাস।

জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক ফরহাদ হোসেন জানালেন, “এবার ফলন ভালো। কিছু গাছ আগেই গাছে থাকা অবস্থায় বিক্রি করেছি। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার মতো কাঁঠাল বিক্রি করেছি।”

তবে খুশি হতে পারছেন না। তাঁর অভিযোগ, “গাছ থেকে কাঁঠাল নামানো, ভ্যান ভাড়া, হাটে এনে বসে থাকা—সব মিলে যে খরচ হয়, শেষে হাতে থাকে সামান্যই।”

এই হতাশা শুধু ফরহাদ হোসেনের নয়। ছোটখোচাবাড়ী বাজারের অনেক বিক্রেতাই একই সুরে বলেন, ভালো দামে বিক্রি হলেও লাভ তেমন হয় না। বাজার ব্যবস্থাপনা, পরিবহন আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে মূল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক উৎপাদকরা।

স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী আলী হাসান জানান, “প্রতিটি কাঁঠাল আকারভেদে ৩০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করি। বড় গাছের কাঁঠাল বেশি দাম পায়। তবে এবার ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহ বেশি, দাম কিছুটা কম।”

আকার, গন্ধ আর রসালোতার ভিত্তিতে ক্রেতাদের আগ্রহও ভিন্ন। কেউ নিচ্ছেন এক গাড়ি, কেউ বা কয়েকশ পিস একসঙ্গে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের আবাদ না হলেও বাড়ির আঙিনায় ছায়াদানের জন্য লাগানো গাছ থেকেই প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়।

বাড়ির আঙিনা বা বাড়ির পেছনের জমি মিলিয়ে প্রায় ১৪২ হেক্টর এলাকায় ছড়িয়ে আছে কাঁঠালগাছ। আর সেই গাছগুলোর ফলই এখন ঠাকুরগাঁওকে দেশের কাঁঠাল মানচিত্রে এনে দিয়েছে বড় অবস্থান।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বললেন, “এই অঞ্চলের কাঁঠাল সুস্বাদু, ঘ্রাণে ভরপুর। ইউরোপের অনেক দেশে কাঁঠালকে ভেজিটেবল মিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে।” তাঁর মতে, স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি করে কাঁঠালকে প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানিমুখী করা গেলে কাঁঠাল হতে পারে ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম অর্থকারী ফসল।


.

রিপোর্টার্স২৪/এস

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪