রাজশাহী প্রতিনিধি :
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অধীন কয়েকটি স্কুলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল আশঙ্কাজনকভাবে কম। কোথাও ১০ জনেরও নিচে, আবার কোনো কোনো স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র একজন। জেলার গ্রামীণ অঞ্চলের এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট এতটাই প্রকট যে, কোথাও কোথাও গত বছর একমাত্র পরীক্ষার্থী ফেল করায় শতভাগ ফেল আর এ বছর পাস করায় শতভাগ পাসের তালিকায় নাম উঠেছে।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী জেলার ১২টি বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় মাত্র ৭৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩০ জন ফেল করেছে, পাস করেছে ৪৪ জন। নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তব চিত্র তার উল্টো। শিক্ষকদের ভাষ্য, বাল্যবিয়ে ছাড়াও নানা সামাজিক কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। অভিভাবকরাও অনাগ্রহী।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড জানায়, এবার বোর্ডের অধীন ২ হাজার ৬৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ পাস করেছে ৯৯টি বিদ্যালয়। সামগ্রিক পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গার্লস স্কুলগুলোর পাসের হার ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যেখানে ছেলেদের উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মডেল স্কুলের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
একজন শিক্ষার্থী, একটাই গল্প
মোহনপুর উপজেলার ধোরসা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র একজন শিক্ষার্থী। গত বছরও একই চিত্র ছিল, তবে তখন ওই শিক্ষার্থী ফেল করেছিল। এবার সে পাস করেছে—জিপিএ ২.২৮ পেয়েছে। বিদ্যালয়টি এবার তাই শতভাগ পাসের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘একসময় স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না থাকায় শিক্ষকরা নিয়মিত আসতেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও অন্য স্কুলে চলে যায়। যেই ছেলেটা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাকেও ধরে ধরে কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়েছে।’
স্কুলের পুরনো ছাত্র ইমন হোসেন জানান, ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়লেও পরে স্কুল ছেড়ে চলে যান। কারণ, শিক্ষকরা অনিয়মিত ছিলেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধোরসা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি টিনশেড ভবনের একটি পরিত্যক্ত, অন্যটি জরাজীর্ণ। ক্লাসরুমে ধুলোমাখা বেঞ্চ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
শিক্ষার্থী কম, পাসও কম
গার্লস স্কুলগুলোতেও একই চিত্র। আটটি গার্লস স্কুল থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫৫ জন, পাস করে ৩১ জন। এর মধ্যে শারেরহাট গার্লস হাই স্কুল থেকে একজন পেয়েছে জিপিএ-৫, আর ৮ জনই পাস করেছে। কিন্তু এমএইচ গার্লস হাই স্কুল থেকে ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই ফেল করেছে। জটনোশি গার্লস হাই স্কুলে ৯ জনের মধ্যে ফেল করেছে ৫ জন।
বিয়াম মডেল স্কুল, রাজশাহী থেকে তিনজন অংশ নিয়ে সবাই পাস করলেও পাকড়ী গার্লস হাই স্কুলে সাতজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন ফেল করেছে। প্রধান শিক্ষক এসএম আক্তার রিজভী জানান, ‘এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রীদের প্রায় সবাই বিবাহিত হয়ে গেছে। এ কারণে তারা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়েছে।’
বাল্যবিয়ে ও শহরমুখীতা দায়ী
অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গ্রামে ১৪-১৫ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা আর স্কুলে ফিরে আসে না। ছেলেরা উপার্জনের আশায় শহরে চলে যায়। ফলে দু’পক্ষেরই পড়াশোনা থেমে যায়।’
শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়েই প্রশ্ন
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.ন.ম. মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থী না থাকলে স্বীকৃতি নবায়ন ঝুঁকির মুখে পড়বে। অনেক সময় প্রভাব খাটিয়ে স্কুল খোলা হয়, পরে দেখা যায় শিক্ষার্থীই নেই। মানসম্মত না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়িয়ে লাভ নেই।’
.
রিপোর্টার্স২৪/এস