রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী জেলায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। আতঙ্কিত হয়ে লোকজন নির্বিচারে সাপ মেরে ফেলছে। জুলাই মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০০টির বেশি সাপ মেরে ফেলার খবর পাওয়া গেছে। এ সময়ে স্নেক রেসকিউ টিম আহত ও জীবিত অবস্থায় ২৫০টি সাপ উদ্ধার করেছে।
স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান বিশ্বাস জানান, নিহত সাপের মধ্যে বিষধর গোখরা ও নির্বিষ দাড়াশ সাপ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মা ও বাচ্চা সাপ একসঙ্গে মারা পড়ছে। তিনি বলেন, “সব সাপ মানুষের ক্ষতি করে না। অনেক সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষকে সচেতন না করলে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।”
পদ্মা চরে সাপের উপদ্রব, গ্রামে আতঙ্ক
সাপের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সাপের উপস্থিতিও বাড়ছে। রাতে সাপ জালে ধরা পড়ছে, আবার কখনও সাপ লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার পর মানুষ আতঙ্কে থাকে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে সবচেয়ে বেশি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর চারঘাট, বাঘা, পবা ও বাগমারা উপজেলা থেকে রেসকিউ কল এসেছে। উদ্ধার হওয়া সাপের মধ্যে রয়েছে গোখরা, দাড়াশ, রাসেল ভাইপার এবং বিভিন্ন প্রজাতির বাচ্চা সাপ।
সাপের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু
চলতি মাসের ২ জুলাই রাজশাহীর তানোর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে সাপের কামড়ে মারা যান ইসমাইল হোসেন (৩৮) নামের এক কৃষক। সকালে জমিতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঘাসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা একটি সাপ তাকে কামড় দেয়। রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, তাকে রাসেল ভাইপার সাপে কামড় দেয়, যদিও তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অ্যান্টিভেনাম সংকট ও জনসচেতনতার অভাব
বোরহান বিশ্বাস বলেন, “সাপের কামড়ের শিকারদের জন্য সরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে অ্যান্টিভেনাম বিনামূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী গরিব, যারা ১৫-২০ হাজার টাকার চিকিৎসা খরচ সামলাতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষ এখনও জানে না কোন সাপ বিষধর, কোনটি নয়। এই ভীতির কারণে নির্বিষ সাপও মারা পড়ছে। অথচ সাপ পরিবেশের জন্য উপকারী প্রাণী। তারা ইঁদুর, ব্যাঙের মতো ফসলের ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে কৃষকের বন্ধু হিসেবে কাজ করে।”
‘সাপকে ভয় নয়, সচেতনতা জরুরি’
রাজশাহী বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, “সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনও কুসংস্কার ও ভীতি রয়েছে। দেশে ১০৩ প্রজাতির সাপ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৫টি প্রজাতি বিষধর। বাকি ৭৫টি নির্বিষ। সব এলাকায় সব সাপ পাওয়া যায় না। তাই চলাফেরায় সাবধানতা এবং সচেতনতা জরুরি।”
.
রিপোর্টার্স২৪/এস