| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অর্ধেকই ঢাকার বাইরে, রোগীও দুই-তৃতীয়াংশ আরও অবনতির শঙ্কা

  • আপডেট টাইম: 09-08-2025 ইং
  • 397238 বার পঠিত
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অর্ধেকই ঢাকার বাইরে, রোগীও দুই-তৃতীয়াংশ আরও অবনতির শঙ্কা
ছবির ক্যাপশন: ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অর্ধেকই ঢাকার বাইরে, রোগীও দুই-তৃতীয়াংশ আরও অবনতির শঙ্কা

রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক :

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নয়নসুকা এলাকার চতুর্থ শ্রেণির মাদ্রাসাছাত্র শামভিল আহমেদ (১০)। ছয় দিন ভুগেছে জ্বর, খিঁচুনি, ডায়রিয়া ও বমির সমস্যায়। প্রথমে পরিবার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। তবে গত ২৮ জুলাই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ওইদিন মধ্যরাতে শামভিলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয় তাকে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাকে। হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা শুরুর মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে ২৯ জুলাই ভোরে মারা যায় শামভিল।

রাজশাহীতে শিশু শামভিলের মৃত্যু পাঁচ দিন পর গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রামের তরুণ চিকিৎসক তাহসিন আজমী (২৬) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ২৯ আগস্ট থেকে তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। পরদিন ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষায় পজিটিভ হন। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) একমাত্র মেয়ে সুহাইরার জন্য বাঁচতে চান বলে জানিয়েছিলেন স্বামী তৌহিদুল ইসলামকে। এটাই ছিল তার শেষ কথা। এরপর অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থাতেই চলে যান না ফেরার দেশে।

শুধু শিশু শামভিল কিংবা চিকিৎসক তাহসিন নন, এ বছর ডেঙ্গুতে সরকারি হিসাবে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ জনই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বরিশাল বিভাগে, চট্টগ্রাম বিভাগ আছে দ্বিতীয় স্থানে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগও ঢাকার বাইরের। এখানেই শেষ নয়, আগামীতে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

তাদের ভাষ্যমতে, ডেঙ্গু এখন রাজধানীর চেয়ে অন্যান্য জেলায় বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তিন ভাগের দুই ভাগ কিংবা তার বেশি রোগী রাজধানীর বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। রাজধানীতে ভর্তি অনেক রোগীও ঢাকার বাইরে থেকে আসছে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি থাকবে, ফলে এই পরিস্থিতি আরও অন্তত দুই মাস থাকবে। রোগটি মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ যেহেতু কার্যকর নয়, তাই নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিজেদের নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এ মৌসুমে ২৩ হাজার ৪১০ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। চলতি মৌসুমে ভর্তি রোগীর মধ্যে ২১ হাজার ৯৯৮ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ৩১৭ জন। ভর্তি রোগীর মধ্যে ১৮ হাজার ২১১ জন রাজধানীর বাইরের রোগী! ঢাকার ৫৯ সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি হন ৫ হাজার ১৯৯ জন। ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগীর। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪ হাজার ৭৫৯ জন। এখনো ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়ছেন আরও ৩৬৭ জন রোগী।

রাজধানীর বাইরে সারা দেশের ১১৮টি হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ২১১ জন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ২৩৯ জন ছাড়পত্র নিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৩০ জন। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪২ জনের মধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে মারা গেছেন ১১ জন, বরগুনায় ছয়জন ও পটুয়াখালীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১৩ জন এবং কুমিল্লায় দুজন মারা যান। খুলনা ও রাজশাহীতে চারজন করে মোট আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নেই। কিন্তু রোগী ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞ জনবল রাজধানীকেন্দ্রিক। গ্রামের ডেঙ্গু রোগী সামলাতে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি। অনেকে বিলম্ব ও অবহেলা করছেন ডেঙ্গুকে। ফলে শেষ সময়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও রোগী শকে চলে যাচ্ছে এবং মৃত্যু বাড়ছে।

তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। ফলে আরও অন্তত দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু সংক্রমণের পিক সময় থাকবে। এই সময়ের মধ্যে কারও জ্বর কিংবা ডায়রিয়া হলে তারা যেন দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়। সামান্য অবহেলায় প্রাণ পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি: গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে সারা দেশে নতুন করে ১৯০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ৪০ জন বরিশাল বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে), ৫০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে), ২৭ জন ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে), ২১ জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের, ৪২ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের, সাতজন খুলনা বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) এবং তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে)। গতকাল ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ২১ হাজার ৯৯৮ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।

রিপোর্টার্স২৪/ঝুম  


ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪