কালাম আজাদ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ভোটের রাজনীতি। অবশ্য ভোট অনুষ্ঠানেও মাত্র ৩ মাস সময় হাতে আছে। এর মধ্যে আসছে ডিসেম্বরে ঘোষিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। তফসিলের আগে আগেই বাংলাদেশে আসতে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। জাতীয় পার্টিও করতে পারবে কি-না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে নির্বাচনে জামায়াতকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন ড. ইউনূস।
কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন এবং তাতে ওঠা অভিযোগ আর অনুসন্ধানই বলে দিচ্ছে তাতে নীলক্ষেতের মতো খোলামেলা প্রেসে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে এবং ছাপানো ব্যালট পেপারের হিসাবেও রয়েছে বড় ধরনের গরমিল। আর সেইসব ভোটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বড় জয় দেখানো হয়েছে। মূলত ভোটের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্বাচনকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস 'টেস্ট ম্যাচ' হিসেবেই নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়। তাতে তিনি দেখতে চেয়েছেন, শিবিরের জয়ে কোন দলের কেমন প্রতিক্রিয়া আসে। আর সাধারণ মানুষেরই বা কেমন প্রতিক্রিয়া হয়। যদিও এসব নির্বাচনের ফল নিয়ে ঘেঁটে দেশজুড়ে নিজেদেরকে হালকা করতে চায় নি বিএনপি। পাশাপাশি এসব নির্বাচন নিয়ে জনগণ মাথা ঘামায় না। তবুও এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতারা সতর্ক রয়েছেন। এই গেলো ইউনূসের এক নম্বরের জামায়াতপ্রীতি।
দ্বিতীয়ত, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জামায়াতের নেতারা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছেন। পক্ষান্তরে একই সময়ের সমাবেশে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে আসছিলো বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিলো, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন না হলে, তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। এই দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যেই লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন ড. ইউনূস। এরপরই ইউনূস জানান ২০২৬ সালের রমজানের আগেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে ভোট। আর তা মেনে নেয় বিএনপি এবং জামায়াত। মূলত তাতে জামায়াতে ইসলামীরই জয় হয়। কারণ তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চেয়েছিলো।
এইতো গেলো, বিএনপিকে 'না দিয়ে ইউনূসের জামায়াতপ্রীতি'।
তৃতীয়ত, ইউনূস কিন্তু চাইলে আদেশ জারির মাধ্যমে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে পারতেন। কিন্তু দেবেন বলে মনে হচ্ছে না। আরও অনেক বিষয় আছে, সেগুলো দেখলেও প্রতীয়মান হচ্ছে, ড. ইউনূস বিএনপি এবং এনসিপিকে সুবিধা না দিয়ে পক্ষান্তরে জামায়াতকেই দিচ্ছেন। আর ভোটে এ কারণেই হয়তো বিএনপি এবং এনসিপি জোটও করতে যাচ্ছে। যতো যাই হোক, ৩৬ জুলাইয়ের আন্দোলনে জনগণ কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে কোথাও কোনও স্বৈরতন্ত্র থাকলে, তা বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। সুতরাং চব্বিশ থেকে শিক্ষা নিলেও ড. ইউনূস জালিয়াতির ভোট করতে পারবেন বলে মনে হয় না। তার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পৃথিবীর বড় বড় দেশ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে বলেই জানিয়েছে।
লেখক : কালাম আজাদ, ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক