| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

স্বাধীনতা না চাওয়া জামায়াত স্বাধীন দেশে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে,এটি ইতিহাসের অপমান

  • আপডেট টাইম: 31-10-2025 ইং
  • 59784 বার পঠিত
স্বাধীনতা না চাওয়া জামায়াত স্বাধীন দেশে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে,এটি ইতিহাসের অপমান
ছবির ক্যাপশন: শাহানুজ্জামান টিটু

শাহানুজ্জামান টিটু 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউ জামায়াতের দ্বারা কোনো কষ্ট পেয়ে থাকলে তিনি মাফ চান। তার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে এজন্য তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তার এই বক্তব্যের পর এদেশের নাগরিকদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার দরকার।

তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভুলের জন্য মাফ চেয়েছেন। প্রশ্ন হলে ১৯৪৭ কেন? ১৯৭১ নয় কেন? অনেকে বলবেন এর মধ্যে তো ৭১ পরে। হ্যাঁ এটা আমিও জানি। কিন্তু মনে রাখতে হবে  দলটির যত অপকর্ম ১৯৭১ সালে সংগঠিত হয়েছে।  এদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার মধ্যেই। তাদের সহযোগিতায় যে অপরাধগুলো সংগঠিত হয়েছিলো তার জন্য কি তারা প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্যাডে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন? না এখনও পর্যন্ত চায়নি।  এদেশের মানুষ ১৯৪৭ এর কথা শুনতে চায়? জবাব না। এদেশের নাগরিকরা জানতে চায় ৭১ সালে জামায়াত যে অপকর্মগুলো করেছে সেই বিষয়ে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ভাবে ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চেয়েছে কি না? তখন হয়ত জাতি চিন্তা করবে তাদের ক্ষমা করা যাবে কি না।

১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের গঠিত সহযোগী সংগঠনগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে মোটাদাগে যে অপরাধগুলো সংঘটিত করেছিল, তা ছিল গণহত্যা, নারী নির্যাতন, মুক্তিকামী যোদ্ধাদের হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক সহযোগিতা। জামায়াতের আমীর কি এই অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমা চেয়েছেন?  উত্তর হলো না, চাননি। কিন্তু কেন? এদেশের নাগরিকরা এসব বিষয়ে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য শুনতে বা জানতে চান? বিদেশে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ৪৭ থেকে এখন পর্যন্ত তিনি যে নিঃশর্ত ক্ষমা বা মাফ চেয়েছেন তা বাংলোদেশের মানুষের সাথে পরিহাস বৈ আর কিছুই না।

জামায়াত ও এর ছাত্র সংগঠন (তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘ) সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে প্রধান ছিলো রাজাকার বাহিনী, আল–বদর আল–শামস বাহিনী। গড়ে তোলা হয় শান্তি কমিটি।  এই বাহিনীগুলো মূলত মুক্তিকামী বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং বহু স্থানে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়। এই সংগঠনগুলো গঠনে সেদিন ভুল হয়েছিলো বলে ক্ষমা চেয়েছেন ? না চাননি। 

জামায়াতের নেতারা কেন বারবার ৭১ কে সামনে না নিয়ে ৪৭ দিয়ে শুরু করে। ইতিহাস বলে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি অংশ নেয়নি, বরং তারা পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। তাদের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন ইসলামি আন্দোলন নয়, বরং এটি ছিল রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী প্রকল্প। তবে দেশ ভাগের পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে তারা ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়। জামায়াতে ইসলামী গঠিত হয় ১৯৪১ সালের আগস্টে পাকিস্তানের লাহোরে। এখন প্রশ্ন হলো দলটি ৪৭ সালে দ্বিরাষ্ট্র গঠনে বিরোধিতা করেছে, ৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় এই দলটি সব সময় একটা অস্থির রাজনীতির মধ্য দিয়ে নিজেদের যেটি সুবিধা সে পথেই হেঁটেছে। ইতিহাসের দৃষ্টিতে এটি এক ধরনের আদর্শ বনাম বাস্তব রাজনীতির সংঘাত। যেখানে জামায়াতে ইসলামী প্রথমে তাত্ত্বিকভাবে বিভাজনের বিরোধিতা করলেও পরে বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর বহুদলীয় গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াত। কিন্তু এই দলটি কখনোই স্থীতিশীল রাজনীতি করেছে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন সময়ে তাদের নিজেদের স্বার্থে ইসলামের নামে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। 

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা থেকে শুরু করে সামরিক শাসনের ছায়াতলে টিকে থাকা, কখনো বিএনপির কাঁধে ভর করা আবার কখনো নিজস্ব শক্তি দাবি করা, সব মিলিয়ে দলটির রাজনৈতিক অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এটাকে আমি বলবো প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের রাজনীতি ও কর্মী সর্মথকদের ধরে রাখতে হলে তাদের সামনে হয়তাবা আর বিকল্প ছিল না! 

তবে এক্ষেত্রে বিএনপির রাজনীতিও দলের মধ্যে ও বাইরে সমালোচিত হয়েছে। বিএনপির মত একদিকে জামায়াতের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে দূরত্বও বজায় রেখেছে।

এটা আমরা সবাই কম বেশি জানি, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সাথে স্বৈরাচার এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। এই সিদ্ধান্তকে অনেকে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া বলে সমালোচনা করেছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপিকে সরকার গঠনের সমর্থন দিয়েছে। আবার বিএনপির সাথে বনিবনা না হলে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনে জামায়াত সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তবে এই আন্দোলনের  সুফল পায় আওয়ামী লীগ। তারা সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৪ সালে বিএনপির সাথে শর্ত সাপেক্ষে আবার জোট গঠন করে। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথমবারের মত ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পায়।

২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে দ্বিচারিতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ও সেনা-সমর্থিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এসব ক্ষেত্রে জামায়াত দ্বিচারিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। এরপর গত ১৬ বছর ধরে প্রকাশ্য রাজনীতিতে কোনঠাসা অবস্থায় ছিলো দলটি। এসময় কখনো বিএনপির কাঁধে ভর করে আবার কখনো নিজেদেরকে আলাদা করে রাজনীতি করে কোনো রকমে নিজেদেরকে টিকিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু বর্তমান নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে নিজেদেরকে অদ্বিতীয় ও অপ্রতিরোধ্য শক্তি মনে করছে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪