এফ শাহজাহান
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পরপরই বগুড়ায় ধানের শীষ আর দাড়িপাল্লার হাইভোল্টেজ লড়াই নিয়ে সারা দেশেই আলোচনা জমে উঠেছে।
বগুড়ার জামায়াতে ইসলামীকে আসন্ন ভোটযুদ্ধে এবার মোকাবেলা করতে হবে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মতো হেভিওয়েট ২ জন শীর্ষ নেতাকে।
এটা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা বড় চমক সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। হার-জিত যেটাই হোক, এখন থেকে দেশের সব মানুষের একটা আলাদা নজর থাকবে বগুড়ার দিকে। ভোটের দিন যতই ঘনিযে আসবে, বগুড়াকে নিয়ে দেশবাসীর কৌতূহলও তত বাড়তে থাকবে।
সেই সঙ্গে বাড়তি কৌতূহল থাকবে বগুড়ার জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সক্ষমতার প্রতিও। সবার মনেই প্রশ্ন থাকবে, এবার কী হবে বগুড়ায় ? বিএনপির ২জন শীর্ষ নেতার প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে কেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে বগুড়ার জামায়াত!
বগুড়ার ৭টি নির্বাচনী আসনে দেশের বড় দলের ২ জন শীর্ষ নেতাই এবার বগুড়ার ২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বগুড়া-৬ সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বগুড়া-৬ আসনে তারেক রহমান এবারই প্রথম প্রার্থী হলেও এর আগে তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া এই আসন থেকে এর অগে ৩ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই আসনে এবার জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন বগুড়া মহানগরী জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল।
এই আসনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৪জন।
বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে প্রার্থী ঘোষণার পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত প্রার্থী বগুড়া সদরের উপজেলার সাবেক ভাইসচেয়ারম্যান আবিদুর রহমান সোহেলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার সংসদ নির্বাচনের প্রথম ভোট। আমার সৌভাগ্য যে প্রথমেই বিএনপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এই আসনে তারেক রহমানের নাম ঘোষিত হওয়ার পর আমার নির্বাচনী কর্মীরা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উজ্জীবিত হয়েছেন। ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ এবং লক্ষ্য করছি। আমরা দলীয় আদর্শ নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে নামবো। আশা করছি এই আসনে আমার ভোটারবৃন্দ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন।
অপরদিকে বগুড়া-৭ আসনটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান। গাবতলী-শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে বেগম খালেদা জিয়া এই আসন থেকে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য,বগুড়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানী।
এই আসনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৭১জন।
মজার বিষয় হচ্ছে বগুড়া-৭ আসনের জামায়াত প্রার্থী গোলাম রব্বানী এর আগেও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়েছেন। তখন জামায়াত তাকে বগুড়া-৬ আসনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবার তাকে আসন পরিবর্তন করে বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন দিলেও তার প্রতিপক্ষ হিসেবে এখানেও মনোনয়ন পেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ আসনে ১,৩৬,৬৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার প্রতিপক্ষ জামায়াত মনোনীত গোলাম রব্বানী ৪৬ হাজার ৯১৭ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন।
এবারে এই আসনে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী ঘোষণার পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত প্রার্থী গোলাম রব্বানীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা আমার সৌভাগ্য যে এর আগেও আমি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। ভাগ্যক্রমে এবারও বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থী হওয়ায় আমার নির্বাচনী কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়েছেন। ভোটরদের মধ্যেও তীব্র আগ্রহ এবং সাড়া দেখতে পাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয় নির্ভর করে আল্লাহর ওপর। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিপক্ষ হিসেবে আমার ভোটারবৃন্দ ভোটযুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ।
নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় এর আগেও বিএনরপির শীর্ষ নেতার বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে নামতে হয়েছে বগুড়ার জামায়াতে ইসলামীকে। তবে এবারই প্রথম একসঙ্গে বিএনপির ২ জন শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে নামতে হচ্ছে বগুড়ার জামায়াতে ইসলামীকে।
১৯৭৩ সালের ১ম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম সিরাজুল ইসলাম সবুজ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর
১৯৭৯ সালে বিএনপির ওয়াজেদ হোসেন তরফদার, ১৯৮৬ সালে জামায়াতের আব্দুর রহমান ফকির, ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুর রহমান ভান্ডারী, ১৯৯১ সালে বিএনপির মজিবুর রহমান, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি বিএনপির মজিবুর রহমান, ১৯৯৬ সালের জুন বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া,২০০১ সালে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া,২০০৮ সালে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া,২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর,২০১৮ সালে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বগুড়া-৭ আসনে বেগম খালেদা জিয়া এর আগে ৫ বার এমপি নির্বাচত হয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে যাঁরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁরা হলেন,১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমানউল্লাহ খান, ১৯৭৯ সালে বিএনপির হাবিবুর রহমান,১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির আমিনুল ইসলাম সরকার, ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুর রহমান ভান্ডারী, ১৯৯১ সালে বিএনপির বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া,১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া,১৯৯৬ সালের জুন বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া, ২০০১ সালে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া,
২০০৮ সালে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির মুমহম্মদ আরতাফ আলী,২০১৮ সালে স্বতন্ত্র রেজাউল করিম বাবলু
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের ডা,মোস্তফা আলম নান্নু এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিএনপির চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিপক্ষে বগুড়ার জামায়াতে ইসলামীর ভোটযুদ্ধটা দেশের ইতিহাসে এক নতুন চমক সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।
সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বগুড়ার জামায়াত এবং বিএনপি এবার ঐতিহাসিক ভোটযুদ্ধে কীভাবে একে-অপরকে মোকাবেলা করে।
.................................
লেখক : ইলেকশন অ্যানালাইসিস
৪ নভেম্বর ২০২৫
রিপোর্টার্স২৪/এসসি