রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য টানা তৃতীয় দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে। দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ঢাকায় এসে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে দেখা গেছে, শিক্ষকরা শহীদ মিনারের চত্ত্বরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছেন। রোদ থেকে রক্ষা পেতে অনেকে গাছের ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে শুয়ে-বসে রয়েছেন। শিক্ষক নেতারা মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন, পাশাপাশি দেশাত্মবোধক ও দাবি-আদায়ের গান-কবিতা পরিবেশন করা করছেন।
এই কর্মসূচি পরিচালনা করছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে চারটি সংগঠন। পরিষদের নেতা মু. মাহবুবর রহমান বলেন,দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ফিরবেন না। দশম গ্রেড আমাদের মর্যাদার প্রশ্ন। প্রাথমিক শিক্ষকরা এ মর্যাদার হকদার।
বৈঠক ও আলোচনায় বলা হয়েছে, আজ বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-এর সম্মেলনকক্ষে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে গণশিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। বৈঠকে শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হতে পারে।
পরিষদের অন্যতম নেতা আবুল কাশেম বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। সেখানে কেন আমরা দশম গ্রেড চেয়েছি, সেই যুক্তি তুলে ধরব। যদি মন্ত্রণালয় দাবি মেনে নেয়, তাহলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাবো। অন্যথায় আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে জানা গেছে, রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত বদলে শিক্ষকরা আজ সোমবারও সারাদেশে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। এতে সাড়ে ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস পাচ্ছেন না; দুপুর পর্যন্ত তারা খেলাধুলা করে বাড়ি ফিরে গেছেন।
কতদিন কর্মবিরতি চলবে এই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক নেতারা বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি (অবস্থান ও কর্মবিরতি) চলবে। অন্যদিকে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদ রানা,বলেন, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তবে সহকারী শিক্ষকরা এখন দশম গ্রেড চাইছেন সেটি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য সেক্ষেত্রে আলোচনা চলছে। আমরা দ্রুত সাড়া দিয়েছি, আলোচনার পথ খোলা রেখেছি। তিনি আরও বলেন, আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন কর্মবিরতি স্থগিত রাখবেন। এখন কথা রাখছেন না,এটা দুঃখজনক।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫,৫৬৯টি এবং সেখানে সাড়া প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এ-সকল বিদ্যালয়ে প্রায় ৯৬ লক্ষ শিশুশিক্ষার্থী পড়ে। শিক্ষকরা কর্মবিরতি দিলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ঘাটতি হতে পারে।
এছাড়া, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে। মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি থাকা অবস্থায় শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে। তাছাড়া, প্রায় ১৬ বছর পর এবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে,এটিতেও প্রভাব পড়বে।
একজন অভিভাবক বলেন, ১৫–১৬ বছর পর এবার বৃত্তি পরীক্ষা হচ্ছে। আমার মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। কিন্তু শিক্ষকরা কর্মবিরতি দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে মেয়েটার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
রিপোর্টার্স২৪/এসসি