রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণভোটের আড়ালে পতিত পরাজিত পলাতক অপশক্তিকে রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কিনা প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, এটা কথার কথা নয়, এটি প্রমাণিত সত্য। রাজনৈতিক ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি দফা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিএনপি অধিকাংশ পয়েন্টেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে। অতএব, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার- জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, বিএনপি এসব অঙ্গীকার রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের প্রতি আহ্বান, অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে, নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনকেই অগ্রাধিকার দেবে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফ্যাসিবাদীদের ছাতার নিচে আশ্রয় নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, কর্মঘণ্টার টাকা কে দেবে? নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলে চাকরিদাতাদের কৌশলে নারীদের চাকরি না দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা, দেশের নারী সমাজের মধ্যে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ছে, আমার মনে হয় এমন পরিস্থিতিতে কর্মজীবী নারীদের মনে ছড়িয়ে পড়া চাকরি সংকোচনের আতঙ্ক কাটানো এই মুহূর্তে কথিত ‘গণভোট’র চেয়ে বেশি দরকার।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা, অপরদিকে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীরা গত কয়েকদিন খোদ রাজধানীতে যেভাবে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে বলে আমি মনে করি।
দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৮ শতাংশ। আরও ১৮ শতাংশ মানুষ যেকোনো সময় গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে। দেশে উচ্চমাধ্যমিক এবং গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রতি পাঁচজনের একজন বেকার। সম্প্রতি বিজিএমইএ জানিয়েছে, গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে কমপক্ষে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এক লাখ ২০ হাজার মতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন এইসব মানুষগুলোর কাছে রাষ্ট্রের হাজার টাকা ব্যয় করে কথিত ‘গণভোট’র চাইতে একটি চাকরি কি বেশি জরুরি নয়?
তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এতো সংস্কার কমিটি হলো অথচ একটি শিক্ষা সংস্কার কমিটি করা হলো না। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের একটি দিক সম্পর্কে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,বর্তমান গ্লোবাল ভিলেজে শিক্ষা-দীক্ষায় টিকে থাকতে হলে আমাদের তথাকথিত ‘গণভোট’ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কমপক্ষে ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। জনগণকে ভয় দেখাতে চাই না,তবে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নাজুক হয়ে উঠছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময় দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর আর কোনো সরকারের পক্ষেই সেই রেকর্ড অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশেরও কম।
রিপোর্টার্স২৪/ এসসি