শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই সড়কে সাধারণ মানুষের পদচারণা অনেকটা কম।
সড়কে গণপরিবহনের দেখাও মেলেনি তেমন। হঠাৎ হঠাৎ যে দুএকটা বাস দেখা গেছে তাতে যাত্রী সংখ্যা ছিলো হাতেগোনা। আর ব্যক্তিগত গাড়িও খুব একটা দেখা যায়নি। তবে বেশিরভাগেরই সড়কেই অটোরিকশার আধিক্য গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বসিলা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, শ্যামলি, আসাদ গেট, ফার্মগেট, তেজগাও, নিকেতনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
লকডাউনকে কেন্দ্র করে আগেরদিনই রাজধানীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। যে কটা খোলা ছিলো তাতেও ছিলোনা উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় অধিকাংশ অভিবাবকই তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি। রাজধানীর গভঃ ল্যবরেটরি স্কুলের এক অভিভাবক রিপোর্টার্স২৪-কে জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সন্তানকে স্কুলে দেননি।
ঢাকা উদ্যানের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তার একমাত্র ছেলেকে পড়াচ্ছেন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে। রিপোর্টার্স২৪-কে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের স্কুল কালকেই বন্ধ ঘোষণা করেছে। এমনদিনে স্কুল খোলা থাকলেওতো ছেলেকে স্কুলে পাঠাতাম না। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।’
সকাল থেকেই সড়কে সাধারণ মানুষের পদচারণা অনেক কম ছিলো। অনেক অফিসগামী যাত্রী বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তীতে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ পায়ে হেটে অফিসে গেছেন। আবার কেউ কেউ ফিরে গেছেন ঘরেই।
ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুমাইয়া আলম। তিনি পল্টনস্থ তার কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাসের অপেক্ষা দাড়িয়ে ছিলেন জিগাতলা বাসেস্ট্যান্ডে। প্রায় ২৫ মিনিট দাড়িয়ে থেকেও বাসে উঠলেন না। কারণ হিসেবে জানালেন আতঙ্কের কথা। তিনি বলেন, ‘এতোক্ষনে একটা মাত্র বাস এলো। কিন্তু উঠতে ভয় লাগছে। যদি কেউ গাড়িতে আগুন দেয় অথবা পেট্রোল বোমা মারে! একটা আতঙ্কতো কাজ করেই।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত রোগীর স্বজন আজিজুল হক সুজন বলেন, ‘মায়ের অসুস্থতা নিয়ে সকালে উত্তরা থেকে রওনা হয়েছি। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হইনি। তারপরও এক ধরনের শঙ্কা কাজ করেছে।’
এদিকে, অপতৎপরতা মোকাবিলার কথা বলে রাস্তায় নেমেছে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা জামায়াতসহ ৮ দল ও এনসিপি। অবশ্য বিএনপি সরাসরি মাঠে না থাকলেও যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার রায়ের দিন ধার্য করাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজধানীতে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এরপর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝটিকা মিছিল করে আসছে। বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। গত কয়েকদিনে আগুন দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ১০টি বাসে। বিচ্ছিন্ন এমন ঘটনা ঢাকার বাইরেও ঘটেছে।
এসব ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলটির নেতারা।
রিপোর্টার্স২৪/ধ্রুব