📍 রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নদীভাঙনের কারণে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে চলমান বন্যা পরিস্থিতি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবে, দেশের ২১ জেলায় প্রায় ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী জেলায়।
নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম
ফেনীতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ২১টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ১০৪টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, দাগনভূঞা ও সদর উপজেলার অন্তত ১০টি নতুন গ্রাম। কোথাও কোথাও পানির স্রোত এতটাই তীব্র যে রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফেনীর ফুলগাজীর দৌলতপুরে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা এবং পাকা রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকরা ত্রাণ বিতরণ ও দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছে।
উপকূলেও বিপদ বাড়ছে
নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোয়াখালীতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীবন্দরগুলোতে জারি করা হয়েছে সতর্ক সংকেত। লক্ষ্মীপুরে ফসলি জমি ও ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।
ফসলহানির ভয়াবহ চিত্র
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যার কারণে নোয়াখালীতে ৭,৮০৬ হেক্টর, কুমিল্লায় ১১,৫৯০ হেক্টর এবং ফেনীতে ১,৬৫৫ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুরসহ আরও ২১ জেলায় বিভিন্ন মাত্রায় ফসলহানি হয়েছে।
প্রশাসনের প্রস্তুতি ও করণীয়
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ বিতরণে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বাঁধ ভাঙা, ড্রেনেজ অব্যবস্থা এবং নদীভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে একই ধরনের দুর্যোগ পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
পরবর্তী করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার পরবর্তী পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, বাঁধ সংস্কার ও দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম জরুরি হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
📎 রিপোর্টার্স২৪/এস