রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক:
একসময় শহুরে রোগ হিসেবে পরিচিত ডেঙ্গু এখন গ্রাম-গঞ্জেও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এ বছরের জুনের পর থেকে ঢাকার চেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ১৬ হাজার ৩৯৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১২ হাজার ৮৫৬ জনই ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। রাজধানীতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৩৯ জন, যা মোটের ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ মাত্র।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গুর ভৌগোলিক বিস্তারে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২১ সালে যেখানে ৮৩ শতাংশের বেশি রোগী ঢাকায় শনাক্ত হয়েছিল, ২০২৩ সালে তা কমে ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশে নেমে আসে। ঢাকার বাইরে রোগীর হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশে। ২০২৪ সালে ঢাকার বাইরে রোগীর হার ৬০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ জানান, ‘২৫ বছরেও ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। অথচ ঢাকার বাইরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা পাঁচগুণ বেশি। এখনই সুনির্দিষ্ট মহাপরিকল্পনা না নিলে আগামী ৩০-৪০ বছর গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ভোগাবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ঢাকার বাইরে বরগুনা জেলাতেই সবচেয়ে বেশি রোগী—৩ হাজার ৯৫৭ জন। বরিশাল বিভাগে রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৬৪৪ জন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আইইডিসিআর পরিচালিত জরিপে ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী পৌর এলাকাকে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহে ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) ৬০ শতাংশ, মাগুরায় ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ শতাংশ এবং পটুয়াখালীতে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, যেখানে ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি গুরুতর বলে ধরা হয়।
এ ছাড়া বরগুনার গ্রামাঞ্চলে করা জরিপে দেখা গেছে, ৭৬ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা আছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে জরিপ, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, জনবল ও বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এখনই গ্রামীণ এলাকায় সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।