| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

৯১ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে, সংকটে জেলে পেশা

  • আপডেট টাইম: 22-07-2025 ইং
  • 453983 বার পঠিত
৯১ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে, সংকটে জেলে পেশা
ছবির ক্যাপশন: ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৯১টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

"আগে নদীতে জাল ফেললেই মাছ উঠত। এখন দিন শেষে ফিরতে হয় খালি হাতে," — এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছরের প্রবীণ জেলে শামসুল হক। জীবনের অর্ধেকটা কাটিয়ে দেওয়া মানুষটি এখন পেট চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মৎস্য দিবসের প্রাক্কালে ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুরে দেখা গেল—একসময় মাছের জন্য বিখ্যাত এ জেলায় আজ দেশীয় মাছের অস্তিত্ব চরম হুমকির মুখে। জেলার মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৯১টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে ৯টি ‘অতি বিপন্ন’, ৩০টি ‘বিপন্ন’, ২৫টি ‘সংখ্যাগ্রস্ত’ এবং ২৭টি ‘প্রায় হুমকির মুখে’।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরাফাত উদ্দিন আহমেদ জানান, “চায়না দুয়ারী জালের অবাধ ব্যবহার, অনিয়মিত বর্ষা, নদী ও খালবিলের সংকোচন, কীটনাশকযুক্ত কৃষিকাজ—সব মিলিয়ে মাছের প্রজননব্যবস্থাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক জলাশয়ে পানি ধরে রাখতে স্লুইস গেট ও রাবার ড্যাম তৈরি এবং অভয়াশ্রম গড়ে তোলা না গেলে দেশীয় মাছ রক্ষা করা কঠিন হবে।”

সদর উপজেলার আকবর আলী বলেন, “আগে চার ভাই মিলে মাছ ধরতাম। এখন আমি রাজমিস্ত্রির সহকারী। মাছ ধরি শুধু শখে, জীবিকার জন্য না।”

হরিপুর উপজেলার জেলে রুহুল আমিনের কণ্ঠেও হতাশা, “জাল আছে, নৌকা আছে, নদীও আছে—কিন্তু মাছ নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।”

জেলার ৯ হাজার ৬২৯ জন নিবন্ধিত জেলের অনেকেই পেশা বদল করে গার্মেন্টস, নির্মাণ বা দিনমজুরের কাজ বেছে নিচ্ছেন।

জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ৯টি সরকারিভাবে ঘোষিত মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেশীয় পোনা ছাড়া ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বাজেট, স্থায়ী নজরদারি ও স্থানীয় সচেতনতা ছাড়া তা টেকসই হবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

জেলার মোট মাছের চাহিদা ৩৬,৩৯১.৬৬ মেট্রিক টন, যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩৭,৫০৫.২০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের অঙ্কে ঘাটতি না থাকলেও দেশীয় মাছের অংশ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।

পরিবেশবিষয়ক সংগঠন সৃজন-এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “দেশীয় মাছ শুধু খাদ্য নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এগুলো হারালে আমরা হারাবো জলজ জীববৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য।”

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন, “পরিকল্পিত নদী ব্যবস্থাপনা, চায়না জাল নিষিদ্ধকরণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং পোনা সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া দেশীয় মাছ রক্ষা সম্ভব নয়।”




.

রিপোর্টার্স২৪/এস

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪