| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

অনশন ভাঙ্গাতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখালেন ডিজি

  • আপডেট টাইম: 13-08-2025 ইং
  • 385137 বার পঠিত
অনশন ভাঙ্গাতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখালেন ডিজি

রিপোর্টার্স ২৪ ডেস্ক : 
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের লক্ষ্যে তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসা বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই দফা কথা বলেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। বুধবার (১৩ আগষ্ট)  অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আন্দোলনস্থল ত্যাগ করেন তিনি। 

পরে মহাপরিচালক শেবাচিম’র সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় তিনি বলেন,  হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে।

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবি তুলেছে তার সবগুলো স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। এগুলো রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার হবে। আন্দোলনকারীরা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পড়েনি। 

গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে জানা গেছে, এ আন্দোলনে তৃতীয় কোনো শক্তির ইঙ্গিত আছে। এমনকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে না সরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’ 

এর আগে, বেলা ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর শিক্ষার্থীদের অনশনস্থলে আসেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

অনশনকারী শাফিন মাহমুদ বলেন, আমাদের ভাইয়েরা ১৭ দিন ধরে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। আমরাও তিন দিন ধরে অনশন করছি।  এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এসে যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো সমাধান দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অনশন করব। একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যদি দেশের মানুষের সঠিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়, সেই মৃত্যু আমরা মেনে নেব।

এদিকে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন রনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আমাদের কোনো প্রতিনিধির বৈঠক হয়নি, তার সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। তবে তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।

ছাত্র-জনতার ব্যানারে বুধবার ছিল আন্দোলনের ১৬তম দিন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে বুধবারও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখছেন। এতে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বুধবার নথুল্লাবাদ ছাড়াও মহাসড়কের সাগরদি পয়েন্ট অবরোধ করা হয়। সেখানে সাগরদি কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।  

অচলাবস্থা অবসানে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বুধবার বরিশালে যান। বেলা ১২টায় শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে যান তাঁরা। প্রথমে মহাপরিচালক জরুরি বিভাগের গেটে আন্দোলনের সমর্থনে অনশনরত তিনজনের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্ত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙতে অস্বীকৃতি জানান। পরে মহাপরিচালক শেবাচিম’র সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। 

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি ডা. কবিরুজ্জামানসহ আরও অনেক চিকিৎসক আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা তাদের নিরাপত্তায় ৬ দফা দাবি দিয়েছেন। তা বাস্তবায়ন না হলে ২৪ ঘণ্টা পর তারাও কাজ বন্ধ করে দেবেন। অপরদিকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার ওপর গুরুত্ব দেন। 

আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ ও সাহাবউদ্দিন মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, ‘আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হলে তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না।’ 

দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সভাকক্ষ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দুই ঘণ্টা সভা শেষে বেলা ৩টায় মহাপরিচালক তার অবস্থানের কথা জানিয়ে শেষ অনুরোধ জানাতে অনশনকারীদের কাছে যান। তখনও অনশনকারীরা মহাপরিচালকের আহ্বান প্রত্যাখান করেন। পরে মহাপরিচালক রাজধানীর উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) আহসান হাবিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য, জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে গত ২৭ জুলাই থেকে বরিশালে আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাদের দাবিগুলো হলো- সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নাগরিকদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। এসব সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে পুনরায় সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।


রিপোর্টার্স২৪/এসএন

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪