| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ডাকাতির অভিযোগে পিটুনিতে একজনের মৃত্যু, গ্রেফতার ছয় 'বাংলাদেশি'

  • আপডেট টাইম: 13-08-2025 ইং
  • 386043 বার পঠিত
সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ডাকাতির অভিযোগে পিটুনিতে একজনের মৃত্যু, গ্রেফতার ছয় 'বাংলাদেশি'
ছবির ক্যাপশন: গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী । ছবি : বিবিসি বাংলা

রিপোর্টার্স ২৪ ডেস্ক : ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ডাকাতি করতে আসা ছয়জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে তারা। ওই দলের আরও একজনকে স্থানীয় গ্রামবাসী মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

একজন 'দুষ্কৃতকারী' এখনো পলাতক বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারদের কাছ থেকে বাংলাদেশ পুলিশের এক কনস্টেবলের পরিচয়পত্র, তিনটি ওয়্যারলেস সেট, কিছু বিস্ফোরক, চাকু, কাঁটাতারের বেড়া কাটার যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে।

তবে পুলিশের পরিচয়পত্রটি আসল কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের।

আবার নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা এবং বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে যে এই পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু তাদের জানানো হয়নি।

সীমান্ত পেরিয়ে 'ডাকাতি'

মেঘালয়ের সাউথ ওয়েস্ট খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট বি জেরোয়া বিবিসি বাংলাকে সম্পূর্ণ ঘটনাক্রমের বিবরণ দিয়েছেন।

তার কথায়, "গত আটই অগাস্টে খুব ভোরের দিকে রঙ্গডাঙ্গাই গ্রামের একটি দোকানে হানা দেয় আট-নয়জন অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতকারী। সেই দোকানের এক কর্মচারী বালস্রাং মারাককে গামছা দিয়ে হাত বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাকে মারধরও করা হয় এবং তার কাছে বার বার দোকানের মালিকের সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হয়।"

"ওই যুবক দুষ্কৃতকারীদের হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তবে দুষ্কৃতকারী দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে এবং কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে। এতে ভয় পেয়ে গিয়ে ওই বাড়ির মালিকরা দরজা খুলে দেয়। এরপর মি. মারাককে ওই দুষ্কৃতকারী ব্যাপক মারধর করে ছেড়ে দেয় ও পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে," বলছিলেন জেলার এসপি মি. জেরোয়া।

ওই এলাকাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে।

পুলিশ সুপারের কথায়, "ঘটনাটির খবর আমরা পাই বেলা সাড়ে দশটার দিকে। ওই যুবককে উদ্ধার করে শিলংয়ের হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুরে আমার কাছে খঞ্জয় এলাকার একটি পাথর খনির মালিকের ফোন আসে। তিনি জানান যে তার এলাকায় কিছু অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখা গেছে।"

"থানার ওসিকে সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দিই আমি। পুলিশ দেখে ওই অপরিচিত ব্যক্তিরা পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে, তখন ওসি দুই রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। ওই দুষ্কৃতকারী কাছে যে পিস্তল ছিল, সেটা দেখতে পান পুলিশকর্মীরা "

ঘন জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও খঞ্জয় এলাকার ওই পাথর খনি এলাকাতে অনেক কিছু ফেলে গিয়েছিল। কুঠার, কাঁটাতারের বেড়া কাটার যন্ত্র, পিস্তলের খোল, স্ক্রু ড্রাইভার, চাকু, বাংলাদেশ পুলিশের পরিচয় পত্রসহ মোট ২১টি সামগ্রী উদ্ধার করা হয় বলেও তিনি জানান।

দুষ্কৃতকারীর খোঁজে তল্লাশি

সেদিনই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে মেঘালয় পুলিশ। ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি ওই এলাকাটি।

পরের দিন, গত শনিবার খঞ্জয় বি গ্রামের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা মেহফুজ রহমান নামের একজন আটক করে পুলিশ। সেদিনই বিএসএফ এবং পুলিশের যৌথ চিরুনি তল্লাশিতে ধরা পরে আরও তিনজন।

"এদের মধ্যে রয়েছেন জামালপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ও মারুফুর রহমান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা সাঈম হুসেইন। এই মারুফুর রহমানেরই বাংলাদেশ পুলিশের পরিচয়পত্র আমরা আগেই উদ্ধার করেছিলাম। ধৃতদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়।"

"এরপরের দিন, গত রবিবার গ্রামবাসীরা মোবারক হুসেইন নামে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা পঞ্চম এক দুষ্কৃতীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সাউথ ওয়েস্ট খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট বি জেরোয়া।

"বিএসএফের সঙ্গে যৌথ তল্লাশির মধ্যেই সোমবার কাইঠাকোনা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা ষষ্ঠ সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে এবং মারধর করে। পরে গ্রামবাসীরাই ওই ব্যক্তিকে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। সে নিজের নাম বলেছিল আক্রাম এবং সে বাংলাদেশের শেরপুরের বাসিন্দা।"

"তাকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। মহেশখোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ডাক্তাররা মৃত বলে ঘোষণা করেন।"

"সপ্তম দুষ্কৃতী স্থানীয় মানুষের হাতে ধরা পড়ে মঙ্গলবার। তারা দুটি বোমা ছুঁড়েছিল যার মধ্যে একটি ফেটেছে। অন্যটি উদ্ধার করতে বম্ব স্কোয়াড গেছে," জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

এখনো একজনকে ধরা যায়নি এবং সে-ই সম্ভবত ওই দুষ্কৃতকারী দলটির মাথা বলে মনে করছে পুলিশ।

আগেও সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধ?

মেঘালয়ের পুলিশ বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের জেরা করে তারা জানতে পেরেছে যে এমাসের ছয় তারিখে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছে।

মহেশখোলা এলাকা দিয়ে তারা সীমান্ত পার হয় বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃতরা। ওই সীমান্তের বিপরীতে বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা।

তারা এবার ডাকাতি ও ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যেই এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ।

কিন্তু সীমান্তের ২০-৩০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে এক ব্যবসায়ীকে কেন অপহরণ করার চেষ্টা করছিল, অথবা তার ব্যাপারে কীভাবে নির্দিষ্ট তথ্য তারা পেয়েছিলো তা এখনো স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন যে এখনো ধৃতদের জেরা করা চলছে।

"গতবছর ঢাকা থেকে একটি ছাত্রকে অপহরণ করে মেঘালয়ে নিয়ে এসেছিল একদল দুষ্কৃতী। এরাই সেই দলটি কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে," বলছিলেন মি. জেরোয়া।

'বাংলাদেশ পুলিশের' জাল পরিচয়পত্র?

বাংলাদেশের পুলিশ ও বিজিবি বলছে যে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই পুরো ঘটনা সম্বন্ধে এখনো কিছু জানতে পারেনি।

নেত্রকোনা এবং শেরপুরের পুলিশ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে যে তারা সংবাদমাধ্যম থেকে ঘটনাটি সম্বন্ধে জেনেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে মেঘালয় পুলিশ অথবা বিএসএফ এখনো কিছু জানায়নি।

আবার বিজিবির ময়মনসিংহ সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে তিনিও সংবাদমাধ্যম থেকেই ঘটনাটি জেনেছেন, কিন্তু বিএসএফ এখনো তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এ ব্যাপারে বিএসএফের মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি।

বাংলাদেশ পুলিশের যে পরিচয়পত্রটি উদ্ধার করেছে মেঘালয় পুলিশ, সেটি জাল কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা।

বিবিসি বাংলাকে তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পুলিশের আইডি নম্বর দশ সংখ্যার হয়। কিন্তু যে ছবিটি পাওয়া গেছে, সেটিতে নয় সংখ্যার আইডি নম্বর দেখা যাচ্ছে। আবার আইডি নম্বরেই জন্মের তারিখ লেখা থাকে, এক্ষেত্রে পরিচয়পত্রে যে জন্মতারিখ দেখা যাচ্ছে, সেটা আবার আইডি নম্বরের শুরুতে নেই।

তাই তাদের মনে হচ্ছে এটি জাল হতেও পারে।

আবার এই গ্রেফতারদের হাতে ওয়্যারলেস রেডিও সেটের মতো যন্ত্র কী করে এল, সেটাও একটা প্রশ্ন। সেরকমই প্রশ্ন যে–– সীমান্ত পেরোনোর পরে ২০-৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল কী করে তারা!

ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অন্য দেশে গিয়ে ডাকাতি বা অন্য অপরাধ ঘটানো নতুন নয়।

বিশেষত, সীমান্ত অঞ্চলে চোরাচালান এবং অপর দেশের কৃষিজমিতে গিয়ে ফসল কেটে আনার মতো অপরাধের ঘটনা মাঝে মাঝেই জানা যায়। আবার ডাকাতি, অস্ত্রসহ হামলার ঘটনাও যে একেবারেই ঘটে না, তাও নয়।

এগুলো বিশেষত ঘটে সেই সব এলাকায়, যেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি সেখানে। 

-বিবিসি বাংলা


রিপোর্টার্স ২৪/এমবি

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪