রিপোর্টার্স২৪ডেস্ক:পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে বিশেষ ক্ষমতা ও আজীবন গ্রেপ্তার–বিচার থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট।
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী আইনে পরিণত হওয়ায় পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা ও সামরিক কাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সমালোচকদের মতে, এর ফলে দেশটিতে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা আরও জোরালো হবে।
সংশোধনী অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে দায়িত্ব পালনকারী সেনাপ্রধান মুনির এখন নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সামরিক বাহিনীর সর্বমোট তত্ত্বাবধান করবেন। তার ফিল্ড মার্শাল পদবি, পোশাক এবং রাষ্ট্রপতির পরামর্শে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে অবসর-পরবর্তী দায়িত্বও আজীবন বহাল থাকবে। ফলে জনপরিসরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বজায় রাখবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সরকার-সমর্থিত মহল বলছে, এই পদক্ষেপে সামরিক কমান্ড আরও সুস্পষ্ট হবে এবং আধুনিক যুদ্ধ কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের ভাষ্য, এটি বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সংস্কারের অংশ।
তবে সমালোচকদের মতে, সংশোধনী বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার ভারসাম্যকে সামরিক বাহিনীর দিকে আরও ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, পাকিস্তান এখন ‘পোস্ট-হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে বেসামরিক-সামরিক ভারসাম্য প্রায় নেই বললেই চলে।
মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক মুনিজা জাহাঙ্গীরের মতে, সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের এই সিদ্ধান্ত উল্টো সামরিক প্রভাবকেই শক্তিশালী করেছে।
বিচার বিভাগে বড় পরিবর্তন
সংশোধনীর আওতায় ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ (এফসিসি) নামে নতুন আদালত গঠন হবে, যা সাংবিধানিক প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। এ আদালতের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। সমালোচকদের মতে, এতে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব বিচার ব্যবস্থায় আরও বিস্তৃত হবে।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এটি ন্যায্য বিচারের ধারণাকেই বদলে দিয়েছে।’ সাংবাদিক আরিফা নূর মনে করেন, বিচার বিভাগ এখন কার্যত নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ হয়ে গেল।
এরই মধ্যে সংশোধনী কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি আথার মিনাল্লাহ ও মনসুর আলী শাহ পদত্যাগ করেন। মিনাল্লাহ বলেন, ‘যে সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলাম, তা আর নেই। শাহের মতে, এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টকে টুকরো টুকরো করেছে’।
সরকার অবশ্য দাবি করছে, এর ফলে দেশের আদালতগুলোতে জনবল ঘাটতি কমবে এবং মামলার জট হ্রাস পাবে। কিন্তু করাচিভিত্তিক আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদের মতে, যুক্তিটি অবাস্তব; কারণ বেশিরভাগ বিচারাধীন মামলাই সুপ্রিম কোর্টে নয়।
তিনি আরও সতর্ক করেন, বিচারকদের সম্মতি ছাড়াই বদলির ক্ষমতা সরকারের হাতে যাওয়ায় তা চাপ সৃষ্টি বা শাস্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক প্রভাবের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানেজেনারেল জিয়া-উল-হক ও পারভেজ মোশাররফের শাসন তার বড় উদাহরণ। সাম্প্রতিক সংশোধনীগুলো সেই ধারাকেই আরও পাকাপোক্ত করছে।
মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বর্তমান অচলাবস্থা দেশটিকে সামাজিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। সাংবাদিক আরিফা নূরও বলেন, সংশোধনী কর্তৃত্ববাদের দিকেই ইঙ্গিত করছে। ইতোমধ্যেই ২৮তম সংশোধনীর সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্র:বিবিসি
রিপোর্টার্স২৪/এসসি