| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

আর আই রফিক -এর গল্প

  • আপডেট টাইম: 14-10-2025 ইং
  • 166419 বার পঠিত
আর আই রফিক -এর গল্প
ছবির ক্যাপশন: আর আই রফিক

ভাঙাগড়া 


দুই বছর বয়সে শুভর মাতৃহারা হওয়ার কথায় নাসরিন জাহানের মনে যেন নতুন করে মাতৃত্ব জেগে উঠেছে। মায়ের আদরে খাওয়ানোর অভিপ্রায়ে ওর থালে মাংসের বিভিন্ন আইটেম তুলে দিচ্ছেন। বিষয়টি শুভর কাছেও অভাবনীয় হয়ে ঠেকছে।


একসময় নাসরিন বললেন-- গেটের ছোট রুমে থাকতে তোমার নিশ্চয়ই কষ্ট হয়। ভিতরেই তো দুটো রুম খালি পড়ে থাকে। আজ থেকে না হয় এদের একটাতেই এসে পড়ো।

শুভ বললো -- ওখানে পরিবেশটা নিরিবিলি। আমার পড়াশোনার জন্য ওখানেই সুবিধা। 


  এ নিয়ে নাসরিন জাহান আর পীড়াপীড়ি করলেন না। তবে পিয়া বলে উঠলো -- বাসার ভিতরে থাকলে আমার একটু সুবিধা হবে। পড়ার সময় আমি একটু হেল্প নিতে পারবো।

  ছোঁয়া সাথে সাথে ছোটবোনকে নাকচ করে দিয়ে বলে উঠলো -- তুই আর কথা পেলি না। নিজের নিয়োগ পরীক্ষার পড়া রেখে তোকে হেল্প করবে কখন ? 


নাসরিন ওদের থামিয়ে দিয়ে বললেন -- ওর নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে যাক্। পরে তোদের সাহায্য করতে পারবে। এখন ওর সময় নষ্ট করা যাবে না।


  খাওয়া শেষে শুভ যখন বইগুলো নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে তখন ছোঁয়া বলে উঠলো -- তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। 

কথাটার অর্থ পুরোপুরি বুঝতে না পেয়ে শুভ জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ছোঁয়া এবার বুঝিয়ে বললো -- বইয়ের একেকটা অধ্যায় শেষ হলে আমাকে বলবে। সেখান থেকে আমি তোমাকে প্রশ্ন করবো। এতে তোমার সুবিধা হবে।


  শুভ বললো -- আমার জন্য আপনি কষ্ট করবেন ? 

  নাসরিন জাহান বলে উঠলেন -- এতে কষ্টের কি আছে ? আর শোন। তুমি ওদের 'আপনি' করে বলবে না। এখন থেকে এই পরিবারেরই একজন হিসেবে ওদের 'তুমি' করে বলবে।

 শুভ মৃদু হেসে বললো -- অভ্যাস হয়ে গেছে তো। তাই একটু ......... 


শুভর কথা শেষ না হতেই ছোঁয়া বলে উঠলো -- ওসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। নইলে বুঝবো, আমরা আপন করে নিতে চাইলেও তুমি আমাদের আপন ভাবতে পারছো না।

 জবাবে কিছু বলতে পারছে না শুভ। এতে ছোঁয়াই আবার বলতে লাগলো -- আজ থেকে তোমাকে ভিতরের রুমেই চলে আসতে হবে। গেটের রুমে বসে হেল্প করতে গেলে অন্যদের চোখে খারাপ দেখাবে। 


  সেদিন থেকে শুভর থাকা আর পড়াশোনার জন্য সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা। ড্রয়িংরুম সংলগ্ন একটা কক্ষে তার থাকার ব্যবস্থা হলো। দু'দিন পরে একজন নতুন দারোয়ানও এলো। শুভর ডিউটি পড়াশুনা আর দিনে একবার বাজার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ছোঁয়া প্রতি রাতেই তাকে সাহায্য করতে আসে।  সাধারণ জ্ঞান বইয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া অধ্যায় থেকে প্রশ্ন করে। শুভ উত্তর দেয়। খাওয়ার বেলায় নাসরিন জাহানের তাগিদে ছোঁয়া আর পিয়ার সাথে ডাইনিংয়ে যেতে হয়। 


 এমনই একদিন শুভর মোবাইলে ইন্টারভিউ কার্ডের মেসেজ। বিকেলে একটা অনলাইন সার্ভিসের দোকান থেকে তার কার্ডটা বের করে এনেছে। এতেই একটু দেরী। সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরায় ছোঁয়া শোকজ করে বসলো -- এতক্ষণ কোথায় ছিলে ? 


   হাতের কাগজটা দেখিয়ে শুভ বললো -- ইন্টারভিউ কার্ড ডাউনলোড করে আনলাম।

   শুভর বাড়িয়ে দেওয়া কাগজটা ছোঁয়া হাতেই নিলো না। বরং একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বললো-- দেখ তো এটা কি ?


 খাম থেকে কাগজটা বের করেই শুভর বিস্ময়ের সীমা নেই। এটাই তো সে ডাউনলোড করে এনেছে। এর পিন নম্বর তো কেবল তার মোবাইলে এস এম এস হিসেবে এসেছে। এই নম্বর অন্যেরা জানার কথা নয় ! তাহলে ছোঁয়া এটা পেল কি করে ! 


 তাকে হতবাক হয়ে ভাবতে দেখে

ছোঁয়াই আবার জিজ্ঞেস করলো -- কি ভাবছো এভাবে ?  

 শুভ বিস্ময়ের সাথেই জিজ্ঞেস করলো-- তুমি এটা পেলে কেমনে ? এর পিন নম্বর তো একমাত্র আমার কাছে।


 বাঁকা হাসি হেসে ছোঁয়া বললো -- আমি তো তোমাকে পড়াই। সুতরাং পিন নম্বরটা আমারও জানা আছে। 

   কিছু বুঝতে না পেয়ে শুভ আবার ভাবনার সাগরে ডুবে যাচ্ছে। 


 ছোঁয়া বইয়ের পাতা উল্টিয়ে তাকে প্রশ্ন করলো -- বল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতায় কে ছিলেন ? 


  শুভর খেয়াল কিন্তু এদিকে নেই। তার ভাবনা, ছোঁয়া কার্ডটা পেলো কিভাবে ? সে ছাড়া অন্য কারো তো এটা পাওয়ার কথা নয়। তার অন্যমনস্কতা দেখে ছোঁয়া আবার বললো -- কি খবর তোমার ? তুমি তো দেখছি এখানে অনুপস্থিত।

    সম্বিৎ ফিরে পেয়ে শুভ বলে উঠলো -- না, না, থাকবো না কেন ? আমি তো সবই শুনছি।

   -- তাহলে বল, আমি কি জিজ্ঞেস করেছি ? 


  শুভ ইতস্তত করতে থাকলে ছোঁয়া বলে উঠলো-- আমি তোমার পুরো নাম জানতে চাইছি। 

   -- কেন, আমার নাম কি তুমি জানো না ? 

   -- না।

   -- তাহলে এই কার্ড ডাউনলোড করলে কেমনে ? কার্ডে তো 'শুভ' উল্লেখ নাই। আছে আমার পুরো নাম। নাম না জেনে এটা ডাউনলোড করলে কিভাবে ? 

    -- বুদ্ধি থাকলে ডিজিটাল যুগে সবই করা যায়। 

   -- তুমি দেখছি, আমার ভিতর বাহির সবই জানো। এতকিছু জানলে কিভাবে ? 

   -- সেটা না হয় পরেই জানলে। 

 এখন কাজে মন দাও তো মিস্টার।


দু'জনে যখন এসব আলোচনা চলমান, পিয়া কিন্তু তখন এ কক্ষের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে চলছিলো। সে এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। তার আপু একবারও তো তাকে সাহায্য করতে আসে না। অনুরোধ করলেও সময়ের অভাব দেখায়। অথচ শুভকে সাহায্য করার বেলায় সময়ের অভাব নেই। ওর কক্ষে গেলে ফিরে আসার কথা যেন ভুলেই যায়। বিষয়টা তাকে মোটেই স্বস্তি দিচ্ছিলো না। তাই একসময় সে ইংলিশ বইটা হাতে নিয়ে অযাচিতভাবেই শুভর কক্ষে গিয়ে বসে পড়লো।

  ছোটোকে দেখে ছোঁয়াতো অবাক। সে বলে উঠলো -- কিরে, তুই এখানে ? 

পিয়া বললো -- একটা বিষয়ে আমার সমস্যা হচ্ছে। তোরা দু'জনের কেউ বুঝিয়ে দিবি ? 


ছোঁয়া যেন এটা মেনে নিতে পারছে না। তাই বলে উঠলো -- তোর টেবিলে যা। আমি আসছি।


শুভ বললো-- না, না। দেখি, ওর সমস্যাটা কোথায়। 

   এরপর পিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো -- আমার কাছে আন, দেখি।


 বই বাড়িয়ে দিয়ে পিয়া বললো -- এই যে, কমপ্লিটিং সেন্টেন্স এর এই নিয়মটা আমি বুঝতে পারছি না। 


ছোঁয়া অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, শুভ খুব সহজ করে পিয়াকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছে। 

পিয়াও বিস্মিত। এটা সে প্রাইভেট টিচারের কাছে আগেই শিখেছে। কিন্তু আজ শুভর কাছ থেকে শেখাটা যেন পূর্ণতা পেলো। এবার সে আরেকটা বিষয় বুঝতে চাইলে ছোঁয়া ধমকে উঠলো -- এই, তোর টেবিলে যা তো। ক'দিন পরেই ওর নিয়োগ পরীক্ষা। এখন তুই এসেছিস্ সারা বছরের ঝামেলা নিয়ে। 


 পিয়া কখনো বড়বোনের সাথে বেয়াদবি করে না। কিন্তু এদিন তার মনোভাবে পরিবর্তন। ছোঁয়ার প্রতি সে রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আঁচ করে ছোঁয়ারও মেজাজ ঠিক নেই। মাকে ডেকে সে পিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বসলো। নাসরিন জাহান উঠে আসার আগেই পিয়া চলে গেল সত্যি, তবে খুশি মনে নয়। অস্পষ্ট কণ্ঠে গজর গজর করতে করতে।

 

 আরেকদিনের কথা। ছোঁয়া, পিয়া দু'বোন যার তার কলেজে। শুভ তার কক্ষে বসে পড়াশুনায় ব্যস্ত। হঠাৎ শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় পিয়া একটু আগেবাগেই বাসায় ফিরে এসেছে। সে ইংরেজি গ্রামার বইটা হাতে করে শুভর কক্ষে গিয়ে বললো -- শুভ ভাই, আমি এখানে বসে পড়লে কি তোমার সমস্যা হবে ? 

 শুভ বললো -- না, সমস্যা কি ? বসে পড়।


কক্ষে একটাই টেবিল। এর একপাশে একটা চেয়ার টেনে পিয়াও বসে পড়ছে। এক ফাঁকে  পড়া বাদ দিয়ে সে গল্পে মেতে উঠলো। গল্পের এক পর্যায়ে বড়বোন ছোঁয়ার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। প্রসঙ্গের শেষ দিকে বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে ছোঁয়ার এঙ্গেজমেন্টের কথাটাও শুভকে জানিয়ে দিতে বাদ রাখেনি পিয়া। 


 যদিও ছোঁয়ার সাথে শুভর কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি, তবু বিষয়টা তাকে একটা অজানা, অপ্রত্যাশিত শূন্যতায় ভাসিয়ে দিচ্ছিলো। আবেগ দমন করে সে জিজ্ঞেস করে উঠলো-- ছেলে কি করে ?  

পিয়া বললো -- সরকারী কলেজের শিক্ষক। 

  -- ভালোই তো। 

 -- আপুর পরীক্ষার পরেই বিয়ে।

 -- ছেলে দেখতে কেমন ?  

পিয়া হেসে উঠলো। বললো -- দেখতে ? হি হি হি, কালো বিড়াল। আমার কাছে একদম ভালো লাগে না।

  -- কেন, কালোরা কি মানুষ না ?

  -- মানুষ না কে কইলো ?

  -- তাহলে হাসলে যে ? 

  -- না, এমনিতেই হাসি পেলো।


 একটু থেমে পিয়া আরো বলতে লাগলো-- অন্য সব দিকেই খুব ভালো। আচরণেও খুবই ভদ্র। তার বাবার একমাত্র ছেলে।


শুভ জিজ্ঞেস করলো -- ছেলেকে ছোঁয়া দেখেছে তো, নাকি ? 

  -- হ্যা, দেখেছে। না দেখে এঙ্গেজমেন্ট হলো কিভাবে ? 

  -- তাইলে আর সমস্যা নাই। বিয়ের আগে চেনা জানার দরকার আছে। 


  এরপর এ বিষয়ে আর কথা নেই। পিয়া নিজের পড়া পড়ছে। শুভ তার নিজেরটা। ঘন্টাখানেক পরে ছোঁয়াও কলেজ থেকে ফিরেছে।শুভর কক্ষে ছোটবোনকে দেখে সে যে খুশী হয়েছে, তার মুখচ্ছবি সেটা বলছে না। বরং উল্টোটার প্রমানই দিচ্ছে।

 

যাক্, ছোঁয়া আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই নাসরিন জাহান পিয়াকে ডাকতে লাগলেন। সুতরাং পিয়াকেও উঠে যেতে হলো। এরও কিছুক্ষণ পরে হাতে 'কারেন্ট নিউজ' নামের একটা ম্যাগাজিন নিয়ে শুভর কক্ষে এলো ছোঁয়া। ওটা টেবিলের উপর রেখে জিজ্ঞেস করলো -- পিয়া কলেজ থেকে কখন এসেছে ?   

 শুভ বই থেকে চোখ তুলে বললো -- এই তো ঘন্টা খানেক হবে।

    ছোঁয়া বিরক্তির সাথে বললো -- ওকে প্রশ্রয় দিচ্ছো কেন ? এতে তোমার পড়ায় ডিস্টার্ব হবে না? 

  -- না, ও কোনো ডিস্টার্ব করেনি। একটা বিষয়ে একটু হেল্প নিতে এসেছিলো।


 শিক্ষকের মত শাসনের সুরে ছোঁয়া বললো -- একে ডিস্টার্ব ছাড়া আর কি বলে ? তোমার নিজের বিষয় থেকে মনযোগ তুলে নিয়ে পরে তো হেল্প করতে হয়েছে, নাকি ? 

  -- এ-তো ঠিকই।


এরপরে শুভ আর কিছু বলতে পারছে না। দেখে ছোঁয়া আরো বললো -- ও কিন্তু বাচাল প্রকৃতির। সবসময় বেশী কথা বলে। ওকে প্রশ্রয় দিয়ো না।


শুভ এবারেও কিছু বলেনি। নতুন ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। তবে তার হৃদয়াকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন। ছোঁয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। একটা দীর্ঘশ্বাস তার বুক থেকে বেরিয়ে গেলো। 

ছোঁয়া বলে উঠলো-- মনটা এমন কেন ? 

   -- কেমন ? 

   -- ভারী ভারী মনে হচ্ছে। 


  মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে শুভ বললো -- না না, সব ঠিক আছে।শরীরটা কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজ করছে।

তার একবার ইচ্ছে হলো, ছোঁয়ার এঙ্গেজমেন্টের ব্যাপারে কথা তুলে। কিন্তু পারলো না। একটু আগে ওর মুখে ছোটবোন সম্পর্কে শোনা মন্তব্যগুলো তাকে আটকে দিলো। 

এসময় ছোঁয়াই আবার বললো -- খেয়েছ তো, নাকি ? 

   -- হ্যা।

 ছোঁয়া বেরিয়ে যেতে যেতে বললো -- আমিও খেয়ে আসি। তারপর কতক্ষণ আলোচনা করে বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলবো। একটু ব্যায়াম না করলে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। 




ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪