| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

ম্যারাডোনার মৃত্যুতে ফেঁসে যাচ্ছেন বিচারক জুলিয়েতা মাকিনতাচ

  • আপডেট টাইম: 07-11-2025 ইং
  • 34778 বার পঠিত
ম্যারাডোনার মৃত্যুতে ফেঁসে যাচ্ছেন বিচারক জুলিয়েতা মাকিনতাচ

রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক : আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুর বিচারপ্রক্রিয়া এখন যেন বাস্তবতা আর নাটকের মাঝামাঝি এক নাট্যমঞ্চ। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে যখন আদালত খুঁজছে এই কিংবদন্তির মৃত্যুর দায়, তখন বিচারক নিজেই হয়ে উঠেছেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।

সম্প্রতি আর্জেন্টিনার সান ইসিদ্রো আদালত জানিয়েছে, ম্যারাডোনার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সাতজন স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে আগামী মার্চে নতুন করে বিচার শুরু হবে। গত মে মাসে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়েছিল, কারণ বিচারক প্যানেলের একজন সদস্য জুলিয়েতা মাকিনতাচ নিজেকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করেছিলেন।

মামলাটি নিয়ে নির্মিত এক তথ্যচিত্রে অংশ নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন এই বিচারক। সেই বিতর্কের জেরে আদালত মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করে।

তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এবার বিচারক মাকিনতাচ নিজেও আদালতের মুখোমুখি। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বুয়েনস এইরেস প্রদেশের রাজধানী লা প্লাতায় তার বিরুদ্ধে নতুন করে বিচার শুরু হয়েছে। অভিযোগ, বিচারকের দায়িত্ব পালনে অনিয়ম করেছেন তিনি। দোষী প্রমাণিত হলে তাকে পদচ্যুত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে আদালত।

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর, হৃদয়বিদারক এক দিন-৬০ বছর বয়সে মারা যান ম্যারাডোনা। মাথায় অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনস আইরেসে এক ভাড়া করা বাড়িতে তার চিকিৎসা চলছিল। সেই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাতজন চিকিৎসাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা দায়িত্বে চরম অবহেলা করেছেন। এমনকি, কৌঁসুলিরা বলছেন, চিকিৎসকেরা জেনে-বুঝেই মৃত্যু ডেকে এনেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দায় উঠেছে ‘ইচ্ছাকৃত হত্যার’ পর্যায়েও।

এই প্রেক্ষাপটে আদালতের দায়িত্বে ছিলেন বিচারক হুলিয়েতা মাকিনটাচ-যিনি তার দৃঢ়তা, আবেগমাখা ভাষ্য এবং ক্যামেরার প্রতি অনুরাগের জন্য পরিচিত। কিন্তু সমস্যার শুরু হয় তখন, যখন জানা যায় বিচারক নিজেই এই বিচারকে ঘিরে বানাচ্ছেন এক মিনি সিরিজ-‘ডিভাইন জাস্টিস’। সিরিজের ট্রেলারই যেন হয়ে ওঠে বিস্ফোরণ। আদালতের গম্ভীর পরিবেশে যখন চালানো হয় সেই ট্রেলার, দেখা যায় হাই হিল পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাকিনটাচ, আর ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে ম্যারাডোনার মৃত্যুর করুণ বর্ণনা।

তখন আদালতে শুরু হয় হৈচৈ। কৌঁসুলিদের ভাষ্য-মাকিনটাচ অভিনয় করছেন, বিচার করছেন না। এক আইনজীবী তো তাকে ‘আবর্জনা’ বলে চিৎকার করেন, বিচারক চুপচাপ বসে পড়েন নিজের চেয়ারে, মুখ নিচু করে। ততক্ষণে ম্যারাডোনার মেয়ে জিয়ান্নিনা এবং সাবেক প্রেমিকা ওজেদা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

এই ঘটনায় শুধু এক বিচারকের নয়, প্রশ্ন উঠেছে পুরো বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েই। আদালত কক্ষের ভেতর দৃশ্য ধারণ করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। আর সেখানে বিচারক নিজেই অংশ নিচ্ছেন নাটকীয় পুনর্গঠন নির্মাণে-এটি শুধু অনৈতিকই নয়, সম্ভবত বেআইনিও। 

অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের কারাদণ্ড হতে পারে ৮ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। তবে বাদীপক্ষের অনেকেই চাইছেন বিচার হোক নতুন করে, নতুন বিচারপ্যানেলে।  

আর্জেন্টিনাবাসীর কাছে ম্যারাডোনা কেবল একজন ফুটবলার নন, তিনি তাদের জাতীয় নায়ক। আগামী মার্চে যখন মামলাটির বিচার নতুন করে শুরু হবে, তখন সবাই আবারও সেই উত্তর খুঁজবেন। ম্যারাডোনা মৃত্যু কি কেবল ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিণতি, না কি চিকিৎসা অবহেলার ফল? আসল সত্যটা কী ছিল তা বিচারের রায়েই বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কোটি ভক্তের হৃদয়ে ম্যারাডোনা আজও অমর। ফুটবল মাঠের প্রতিটি বাকে এখনো বাজে তার নাম- 'ডিয়েগো! ডিয়েগো!'

রিপোর্টার্স২৪/আরকে


ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪