| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

দুর্নীতির অভিযোগ,না সরকারবিরোধী কথা কেন গ্রেপ্তার কলিমউল্লাহ, আনিস আলমগীরের প্রশ্ন

  • আপডেট টাইম: 08-08-2025 ইং
  • 401099 বার পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ,না সরকারবিরোধী কথা কেন গ্রেপ্তার কলিমউল্লাহ, আনিস আলমগীরের প্রশ্ন
ছবির ক্যাপশন: দুর্নীতির অভিযোগ,না সরকারবিরোধী কথা কেন গ্রেপ্তার কলিমউল্লাহ, আনিস আলমগীরের প্রশ্ন

রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক :

সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর প্রশ্ন করেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ, না সরকারবিরোধী কথা—কেন গ্রেপ্তার কলিমউল্লাহ? বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ প্রশ্ন করেন।

ওই ফেসবুক পোস্টে আনিস আলমগীর লেখেন, নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মতো টকশো-পাগল মানুষ আমি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমি যখন টকশোর উপস্থাপক ছিলাম, তাকে যখনই ডেকেছি, তিনি উল্কার গতিতে সাড়া দিয়েছেন। তবে আমার মনে পড়ে না, আমি কখনো তার সঙ্গে সহ-আলোচক হিসেবে একসাথে টকশোতে বসেছি।

তিনি লেখেন, ২৪-এর ৫ আগস্টের পর অন্তত তিনজন উপস্থাপক আমাকে তার সঙ্গে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ তিনি কী বলেন,আগা-মাথা কিছুই বুঝি না আগে থেকে। তার টকশো শুনি না।

ইউটিউবে যেসব হেডলাইন দেখতাম, তা ছিল ভয়ংকর—দলীয় দালালি, গুজব আর চটকদার শিরোনামে ভরা। তবুও বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি, তার ভিউয়ার সংখ্যা অনেক বেশি।

এ সাংবাদিক লেখেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে, শেখ হাসিনার আমলে, আমি উপস্থাপক থাকাকালে তাকে কয়েকবার বিভিন্ন নির্বাচনী আলোচনায় অতিথি করেছিলাম। আমাদের দেশে যারা নির্বাচনী দোকান খুলে বসেছেন, জানিপপ দিয়ে তিনি তাদের অন্যতম।

চাই না চাই, তখন ডাকতেই হতো। তবে সত্যি বলতে, তার বলা কথার অর্ধেকও আমার বোধগম্য হতো না। মিনমিন করে বলবেন। তা সত্ত্বেও আমি দেখেছি, তিনি আমাকে পছন্দ করতেন। ২০১৮ সালে তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের একটি প্রোগ্রামে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বক্তৃতা দিতে।

তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের আলোচনাসভাতেও আমি অংশ নিয়েছিলাম। আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন, আপ্যায়ন করেছেন—তার সরকারি বাংলোয় দুপুরের খাবারের আয়োজন থেকে শুরু করে যাতায়াতে বিমানের ব্যবস্থাও ছিল।

তবে তার রাতের ভিসি থাকার বিষয়টি আমার ভালো লাগেনি। আমার ধারণা, টেলিভিশন টকশোতে অংশ নেওয়ার নেশাতেই তিনি ঢাকায় থাকতেন, নিজের ক্যাম্পাস ফেলে। এমনও নজির আছে,শুধু একটি টকশোতে অংশ নিতে তিনি ঢাকায় উড়ে এসে, টকশো শেষে ফিরে গেছেন।

তিনি আরো লেখেন,আজ কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করার পর কয়েকজন আমাকে ট্যাগ করে লিখেছেন। এরপর কি আনিস আলমগীর, মাসুদ কামাল, অমুক তমুক?” অনেক ইনবক্স মেসেজ পেয়েছি, এমনকি দুটি ফোনও।

সরকার বলছে, কলিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে। কিন্তু তিনি এই কয়দিনে টকশো দিয়ে মানুষের মনে বসিয়ে দিতে পেরেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সরকারবিরোধী কথা বলার কারণে।

আমি মনে করতে পারছি না, শেষ কবে কাউকে শুধু সরকারের সমালোচনা করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল? ড. ইউনূস কথা বলার স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এখনো পর্যন্ত রক্ষা করেছেন, যদিও পেছনে মব লাগানো আছে।  জানি না সামনে উনার নিয়ত কি!

আর সরকারের  সমালোচনা  মানেই কি কথিত পলাতক ইউটিউবারদের মত গালাগালি, হত্যার হুমকি দেওয়া, বিভ্রান্তিকর তথ্য, কিংবা আগডুম-বাগডুম প্রোপাগান্ডা? সমালোচনা তো হওয়া উচিত সভ্য ভাষায়, বস্তুনিষ্ঠ এবং সমাজের ও সরকারের উপকারের জন্য।

কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে সেগুলোর সত্যতা তদন্তের বিষয়। বিচারাধীন বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবে এটাতো সত্য, তিনি নাইট ভিসি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এবং ভিসির মর্যাদা হারিয়ে সরকারের (বিশেষ করে দীপু মনি) বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলতেন। অথচ এই পদটাই তিনি পেয়েছিলেন শেখ হাসিনার সরকারের কল্যাণে যার অপব্যবহার শুরু হয়েছিল তখন থেকেই।

আনিস আলমগীর লেখেন, সরকার পরিবর্তনের পর, তিনি বিশেষ উদ্দেশ্যে  টার্গেট করেন বর্তমান সরকারকে। আর আজকের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, তিনি তার উদ্দেশ্যে সফল অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে টকশোতে সরকারবিরোধী কথা বলার কারণে, দুর্নীতির জন্য নয়। আমি বিভ্রান্ত—কে আসলে সঠিক- সরকার না জনগণ?

তার মতলবি কর্মকাণ্ড আমার ভালো লাগত না, আমি সমালোচনাও করেছি। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি আমাকে ফেইসবুক থেকে ‘আনফ্রেন্ড’ করেছেন—এটাও আমি লক্ষ্য করেছি। আমি এখানে মাইন করিনি। কারণ একজন নিন্দুক তার ফেইসবুক ফ্রেন্ড হিসেবে থাকবে কেন! সামাজিক বন্ধু থাকুক। যেটা আমি ছিলাম এবং তিনি সবসময় আমার সাথে বিনীত ব্যবহার করতেন।

যাই হোক, চিন্তার কিছু নেই এ দেশে দুর্নীতি করলেও কেউ বেশিদিন জেলে থাকে না। এমনকি ড. ইউনূসের সরকারও তাকে আটকে রাখতে পারবে না চিরদিনের জন্য। অন্যায় না করলে তো মুক্তি পাবেনই।

তবে একটা কথা না বললেই নয় কলিমউল্লাহ যদি দুর্নীতির অভিযোগ পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য গ্রেফতার হয়ে থাকেন, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে এর তীব্র নিন্দা জানাই।

নিজের ব্যাপারে তিনি লেখেন, আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই। আমাকে নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, আবার যারা খায়েস প্রকাশ করছেন আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, তাদের বলি: আমি কোনো দুর্নীতিতে জড়িত না। আমি কোনো সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্য পাইনি। কোনো সরকার প্রধানের সঙ্গে বিদেশ সফর করিনি, কোনো সরকারি পদক পাইনি। কোনো সরকারকে রক্ষা করার বা ফেলে দেওয়ার মিশনে নেই এবং ছিলামও না- আমি এটাকে একজন পেশাদার সাংবাদিকের দায়িত্ব মনে করি না।

তবে সরকারের হাত অনেক লম্বা যদি সাজা দিতে চায়, উপায় বের করতে কষ্ট হয় না। এর জন্য টকশো লাগে না, অপরাধ করতে হয় না, সরকারের ভেতর কোনো ‘বন্ধুরূপী শত্রু’ থাকলেই যথেষ্ট।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য (ভিসি) নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে দুদকের মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।




রিপোর্টার্স২৪/ঝুম  

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪