| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

প্রবাসী ও জনগণের করের ৩হাজার কোটি টাকা গচ্ছার ফন্দি

জনগণকে অন্ধকারে রেখে তামাশার গণভোট

  • আপডেট টাইম: 31-10-2025 ইং
  • 60121 বার পঠিত
জনগণকে অন্ধকারে রেখে তামাশার গণভোট
ছবির ক্যাপশন: কালাম আজাদ

কালাম আজাদ  

আমরা জাতি হিসেবে আসলে খুবই রসিক। যেখানে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা তাঁদের বেতনের জন্য দিনের পর দিন আন্দোলন করেন, সেখানে আমরা গণভোটের নামে ৩হাজার কোটি টাকা পানিতে ঢালার অপচেষ্টায় আছি। আমাদের মনে রাখতে হবে এই টাকা প্রবাসীদের ঘামে ভেজা টাকা, কৃষকদের শ্রমে ভেজা টাকা।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সময়ের প্রয়োজনে সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তখন ভোটারের উপস্থিতি ছিলো নেহায়েত কম। তবুও অন্তত দুটি ভোটে সংশ্লিষ্টরা ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল ভোটারের উপস্থিতি দেখিয়েছিলেন এবং 'হ্যাঁ' ভোটের বিজয় হয়েছিলো।

১৯৭৭ সালের ৩০ মে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁর রাষ্ট্রপতি পদের বিষয়ে 'হ্যাঁ' অথবা 'না' জানতে চেয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ নিজের কাজ ও নীতির বৈধতার ব্যাপারে গণভোট করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আর সর্বশেষ গণভোট হয়েছিলো ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। ওই গণভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসন ব্যবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রীশাসিত শাসন ব্যবস্থায় ফিরেছিলো। তবে ওই তিনটি গণভোটেরই প্রশ্ন ছিলো সংক্ষিপ্ত এবং জনগণের জানাশোনা। একইসঙ্গে সম্পূর্ণ বিষয় ব্যালটে প্রশ্ন আকারে উত্থাপিত হয়েছিলো।

আর এবার যে গণভোটের কথা বলা হচ্ছে, সেটি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট। অথচ জুলাই সনদে মোট ৮৪টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। যা বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল নিজেরাই জানে না বা জানলেও ভালো করে বোঝে না। সেখানে সকল সাধারণ জনগণ ৮৪টি বিষয়ের সবগুলো জেনে যাবে, সেটা ভাবাও তো এক ধরনের বোকামি। আবার জুলাই সনদের বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিশন দিনের পর দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, তাদের মতামত নিলেও চূড়ান্তকরণের সময় তাঁদের নোট অব ডিসেন্ট রাখা হয় নি। 

সার্বিকভাবে, চরম হাস্যকর বিষয় হলো : জামায়াতে ইসলামীসহ বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলো নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের কথা বলছে। অথচ জুলাই সনদের সারমর্মও গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার বা প্রকাশিত হয় নি এখনও। অর্থাৎ বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণই জুলাই সনদ নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। আর তাঁদের অন্ধকারে রেখেই শিগগিরই গণভোট আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে ইসলামী দলগুলো।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। আর সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে নভেম্বরে গণভোট আয়োজন ইসির পক্ষে কঠিনই বলা চলে। আর আয়োজন যদি করাও হয়, তাহলেও খরচ হবে কমবেশি ৩০০০ কোটি টাকা। যা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। এই টাকা দিয়ে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব। 

টাকার হিসাব ছাড়াও ইসি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে এগিয়ে যেতে না পারলে অর্থাৎ নভেম্বরে তাদেরকে গণভোটের আয়োজন করতে হলে, জাতীয় নির্বাচন যে পেছাবে; সেটি সুনিশ্চিত। আর জাতীয় নির্বাচন পেছালেও সমস্যা নেই বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির নেতারা। তবে বিএনপি এবং গণ অধিকার পরিষদ চাইছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হোক। তাতে বাড়তি ব্যয় থেকে বাঁচবে দেশ। একইসঙ্গে ভোট পিছিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই।

চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের পর দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো, তা অনেকটা নিরসন করতে সমর্থ হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অথচ যদি গণভোট প্রশ্নে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা তৈরি হয়, তাতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন হবে, বৈকি!

লেখক : ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ রিপোর্টার্স২৪ -সংবাদ রাতদিন সাতদিন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪